নাটোর প্রতিনিধিঃ অসম প্রেম ও অতঃপর বিয়ে। সবেমাত্র ছয় মাস পার হলো তাদের সংসার। তবে শেষ পর্যন্ত একটি মৃত্যু দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটলো তাদের প্রেমের সংসার। বয়সে ২০ বছরের ছোট কলেজ ছাত্র মামুনকে(২২) বিয়ে করে ভাইরাল হওয়া কলেজ শিক্ষিকা এখন কেবলই ইতিহাস।
বলছি নাটোরের কলেজ ছাত্র মামুনকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন দেখা গুরুদাসপুরের খুবজীপুর ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের কথা।
পুলিশ আজ(১৪ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে আলোচিত ওই সহকারী অধ্যাপকের গলায় ওড়না পেচানো মৃতদেহ উদ্ধার করেছে নাটোর শহরের ভাড়া বাসা থেকে। স্বামী মামুন(২২)কে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়েছে পুলিশ। লাশ ময়না তদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সকালে মামুন উপস্থিত পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, ভোর ৪টার দিকে বাইরে থেকে এসে দেখি ঘরের দরজা খোলা। পরে দেখি ওড়না দিয়ে পেচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। ওড়না কাটার জন্য তাৎক্ষণিক ছুরি বা বটি না পাওয়ায় পকেটে থাকা ম্যাচলাইট দিয়ে ওড়নার মাঝখানে পুড়িয়ে লাশ তার স্ত্রীকে নামিয়েছে সে।
মামুন আরও জানান, তার স্ত্রী বেতন পেতেন ৩৫ হাজার টাকা। বিভিন্ন জায়গায় ঋণ পরিশোধ করে হাতে থাকত মাত্র আট হাজার টাকা। গতকাল খাইরুন নাহারের আগের সংসারের ছেলে এসে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে যান। বাকি তিন হাজার টাকার মধ্যে বাড়িতে ছিল মাত্র এক হাজার টাকা। এসব নিয়ে খাইরুন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
এবিষয়ে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিন বলেন, ‘শনিবার(১৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে বাসায় প্রবেশ করেন মামুন। আবার রাত আড়াইটার দিকে বের হন। কেন বের হচ্ছেন- জানতে চাইলে মামুন বলেন, ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন। পরে সকাল ৬টায় মামুন আবার ফিরে আসেন।’
তিনি বলেন, ‘বাসায় ফেরার পর মামুন আমাকে ডাকেন। আমি চার তলায় গিয়ে দেখি, খাইরুন নাহারের লাশ ঘরের মেঝেতে।’
আজ(১৪ আগস্ট) সকালে নিহতের ভাই সাবের হোসেন বলেন, ‘সকালে একটা কল আসে যে, আমার বোন নাকি আত্মহত্যা করেছে। খবর শুনেই গুরুদাসপুর থেকে ছুটে আসি। এসে দেখি বোনের মরদেহ মেঝেতে পড়ে আছে। মরদেহের গলায় বেশ কিছু দাগ রয়েছে। এতে মনে হচ্ছে ঘটনাটি আত্মহত্যা নয় পরিকল্পিত খুন। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি।’
নিহত শিক্ষক খায়রুন নাহারের ভাগ্নে নাহিদ হোসেন দাবি করেন, আটক স্বামী মামুন একজন নেশাখোর। বিয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত সে ৫ লাখ টাকা ও একটি পালসার মোটরসাইকেল নিয়েছে। সম্প্রতি ওই মোটরসাইকেল তার ভালো লাগছে না এমন কথা জানিয়ে আরো দামী মোটরসাইকেল চেয়েছে। এ নিয়ে তার খালামনি মানসিক চাপে ছিলেন। এ ছাড়াও সম্প্রতি গুরুদাসপুরে মাদক নিয়ে কিছু বখাটের মধ্যে গোলমাল হয়। ওই ঘটনায় সে আসামি হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মানসিক, পারিবারিক ও বিভিন্ন চাপে অশান্তিতে ছিলেন তিনি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা নাটোর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দীন জানান, জেলা পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে। আর পিবিআই পুলিশ ওই ঘটনার ছায়া তদন্ত করছে। আশা করি খুব দ্রুতই ঘটনার রহস্য উন্মোচন হবে।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। দ্রুতই রহস্য উদঘাটন করা হবে।