মহিউদ্দিন ভূঁইয়াঃ ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর, সাবেক সংসদ সদস্য, গাজীপুরের কৃতীসন্তান, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন (১৯৩০ – ১৯৮৪)-এর আজ ৩৮-তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৪ সালের আজকের এইদিনে (২৭ সেপ্টেম্বর) সারাদেশে ২২ দলের আহুত হরতাল পালন ও মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কালীগঞ্জ থানার সামনে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পেটুয়া বাহিনী তাঁর ওপর আক্রমণ চালালে ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদাতবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, চার মেয়ে (কুইন, চুমকি, ইভা ও শোভা) এবং এক ছেলে (ইউসুফ ইকবাল) সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
শহিদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন ১৯৩০ সালের ১৭ মার্চ বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার বড়হরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শেখ সুরুত আলী ছিলেন গ্রাম্য মাতবর। চারভাইয়ের মধ্যে সবার বড়ো মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন।
ময়েজউদ্দিনের শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় নয়াপাড়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে। তিনি ওই স্কুল থেকে স্কলারশিপ নিয়ে চতুর্থ শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন চুপাই জুনিয়র হাই স্কুলে এবং এখান থেকে ৮ম শ্রেণি পাস করে ভর্তি হন কালীগঞ্জ রাজেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৪৮ সালে তিনি কালীগঞ্জ রাজেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা কলেজ থেকে তিনি ১৯৫০ ও ১৯৫৪ সালে যথাক্রমে আইএ ও বিএ পাস করেন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে আইনপেশার সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা কলেজে অধ্যয়নকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংস্পর্শে আসেন এবং ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। তিনি ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর হামুদুর রহমান শিক্ষাকমিশন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয়দফা আন্দোলন ও ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা কমিটির তিনি ছিলেন আহ্বায়ক এবং মামলায় অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্যদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি আইনি লড়াই করেন।
মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন প্রথমে ঢাকার কমলাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ঢাকা – ২১ আসন (বর্তমানে গাজীপুর – ৫ আসন) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের চরম সংকটময় মুহূর্তে তিনি দলকে সংগঠিত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করেন। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের প্রথমে সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জিয়া ও এরশাদের সামরিক শাসন-বিরোধী আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত সাহসী ভূমিকা পালন করেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
শহিদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি)-এর মহাসচিব, রেক্সোর প্রেসিডেন্ট এবং সমবায় বাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন।
শহিদ মোহাম্মদ ময়েজউদ্দিনের সুযোগ্য উত্তরসূরি, মেজ মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বর্তমান সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদিকা এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী।
লেখকঃ সম্পাদক।