মোঃ মহিউদ্দিন ভূইয়াঃ বাংলা নাট্যজগতের সাড়াজাগানো ও জনপ্রিয় অভিনেতা, পাবনা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর সহ সাংস্কৃতিক সম্পাদক এবং বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী চঞ্চল চৌধুরীর আজ শুভ জন্মদিন। ১৯৭৪ সালের আজকের এই দিনে তিনি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রাধাগোবিন্দ চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন; অবসর গ্রহণের পর নাজিরগঞ্জ এলাকার জনগণের বিশেষ অনুরোধে পুনরায় ১৯৯৫ সালে তিনি নাজিরগঞ্জ এস এ খান কিন্ডারগার্টেন ও স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে নিযুক্ত হন এবং ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবসর নেন; সুজানগর এলাকায় তিনি দুলাল মাস্টার হিসেবে সুপরিচিত এবং একজন অসাম্প্রদায়িক উদারচিন্তার মানুষ হিসেবে সমাদৃত। চঞ্চল চৌধুরীর মাতা নমিতা চৌধুরী গৃহকর্মের পাশাপাশি ধর্মীয় ও সামাজিক নানা কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত আছেন। রাধাগোবিন্দ চৌধুরী ও নমিতা চৌধুরী দম্পত্তির আট সন্তানের (পাঁচ কন্যা ও তিন পুত্র) মধ্যে চঞ্চল চৌধুরী কনিষ্ঠ। পুত্রদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ- জয়ন্ত চৌধুরী এমকম ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে ভারতের শিলিগুড়িতে একটি বেসরকারি কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দ্বিতীয় অচিন্ত চৌধুরী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমানে ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (সহযোগী অধ্যাপক) হিসেবে কর্মরত আছেন। কন্যারা সকলেই উচ্চশিক্ষিত এবং বিবাহিত।
চঞ্চল চৌধুরী কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি স্থানীয় উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি এবং রাজবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ১৯৯৬ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৯৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০১ সালে সোডা-কোডা-ইউডা, ধানমণ্ডি, ঢাকায় চারুকলার প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে চঞ্চল চৌধুরী তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং সেখানে তিনি ২০০৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন।
১৯৯৬ সালে আরণ্যক নাট্যদলের সদস্য হিসেবে চঞ্চল চৌধুরী নাট্যজগতে প্রবেশ করেন। মামুনুর রশীদের “সুন্দরী” নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে টিভি-পর্দায় আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। তার প্রথম অভিনীত বিজ্ঞাপন “মায়ের মোবাইল” এবং প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র “রূপকথার গল্প”। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক : কালো দৈত্য, জয়জয়ন্তী, প্রকৃতজনের কথা, ময়ূর সিংহাসন, সংক্রান্তি, রাঢ়াঙ, চোর সাইকেল, মানুষ, শত্রুগণ, ওরা কদম আলী। টেলিভিশনে অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক : এনেছি সূর্যের হাসি, ভবের হাট, ঘর কুটুম, শান্ত কুটির, সাকিন সারিসূরি, আলতা সুন্দরী, কাজল, হাত, গরু চোর, ওয়ারেন, পত্রমিতালী, পাত্রী চাই, অলসপুর, মনরঙ্গিলা, নিখোঁজ সংবাদ, তালপাতার সেলাইসহ প্রায় সাড়ে ৪০০ নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বিজ্ঞাপন : ইউটিসির গুঁড়া মসলা, মাই ওয়ান ফ্রিজ, টিএইচপি অ্যারাবিয়ান হর্স ডেউটিন ইত্যাদি। অভিনীত চলচ্চিত্র : মনপুরা, মনচোরা, ইন্দুবালা, মা, আয়নাবাজি, রূপকথার গল্প, দেবী, তাকদীর ইত্যাদি। গানের অ্যালবাম : একক- পালকি এবং দৌত- মনপুরা, মনচোরা, ইন্দুবালা, মা ইত্যাদি।
চঞ্চল চৌধুরী হাস্যরস অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সেরা অভিনেতা বিভাগে একটি দর্শক জরিপ পুরস্কার ও দুটি সমালোচক বিভাগে পুরস্কার বিজয়সহ মোট বারোটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংবাদ সংস্থা, আমেরিকার ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড (৯ বার), সিজেএফপি পুরস্কার (১০ বার)-সহ অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা লাভ করেন।
লেখকঃ সম্পাদক ও প্রকাশক।