মোঃ মহিউদ্দিন ভূঁইয়াঃ জাতীয় চারনেতার অন্যতম শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ-এর আজ শুভ জন্মদিন। ১৯২৫ সালের আজকের এই দিনে (২৩ জুলাই) বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার দরদরিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৌলভি মুহাম্মদ ইয়াসিন খান এবং মাতা মেহেরুন্নেছা খানম। তারা ছিলেন চার ভাই ও ছয় বোন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ ঢাকার মুসলিম বয়েজ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে সম্মিলিত মেধাতালিকায় বারোতম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে প্রথম বিভাগে চতুর্থ স্থান অধিকার করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৫৩ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে জেল থেকে পরীক্ষা দিয়ে তিনি এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাইনর ইংরেজি স্কলারশিপ পরীক্ষায় ঢাকা জেলার মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন।
শহীদ তাজউদ্দীন চল্লিশের দশকে নিখিলবঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতৃস্থানীয় সদস্য ছিলেন। ১৯৫১ সালে যুবলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯২-ক ধারায় গ্রেফতার হন। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর গ্রেফতার হন এবং ১৯৫৯ সালে মুক্তিলাভ করেন। ১৯৬২ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে এনডিএফ-এর গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের সম্মেলনে যোগ দেন। এই সম্মেলনেই ঐতিহাসিক ছয়-দফা প্রস্তাব পেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উল্লেখ্য, ছয়-দফার অন্যতম রূপকার ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
১৯৬৬-১৯৭২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৮ মে ১৯৬৬ তারিখে দেশরক্ষা আইনে গ্রেফতার হন এবং মুক্তি পান ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ তারিখে। ১৯৭০ সালে ঢাকা-৫ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায় তিনি অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ২৬ অক্টোবর ১৯৭৪ তারিখে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হলে ওই একই দিনে তাজউদ্দীনকে গৃহবন্দি করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় ২৩ আগস্ট। ৩ নভেম্বর ভোর রাতে জেলখানার সকল নিয়ম ভঙ্গ করে ঘাতকরা তাজউদ্দীন আহমদসহ আরও ৩ জাতীয় নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাজউদ্দীন আহমদকে।