কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কয়েক শতক জমির উপর তিনটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে। একটি ঘর ভাঙাচোরা আধাপাকা হলেও বাকি দুটি জরাজীর্ণ। একটির চাল আছে বেড়া নেই, অপরটির ভঙ্গুর দশা। কোন শিক্ষার্থী না থাকলেও কাগজে কলমে এখানে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। চলতি অর্থবছরে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভূক্ত হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার বাকরের হাট এলাকায় আখতার বানু নামে এক ব্যক্তি মন্ডলপাড়া মিশন ইবতেদায়ী মাদরাসা, বাকরের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক ভোকেশনাল নামে তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তিনটি বিদ্যালয়ের দুটির প্রধান শিক্ষক আখতার বানু।
স্থানীয়দের দাবি, কাগজে কলমে এসব প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেই কোন শিক্ষার্থী। এমনকি এখানে শিক্ষা কার্যক্রম চোখে পড়েনি তাদের। সম্প্রতি বাকরের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় যার ঊওওঘঙ-১৩৩৮৯১এমপিও ভুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। আখতার বানু অসাধুপায় অবলম্বন করে কারসাজির মাধ্যমে বিদ্যালয়টি এমপিও তালিকাভূক্তি করেছেন বলেও জানান স্থানীয়রা।
সম্প্রতি সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ তিনটি টিনশেড ঘর পড়ে আছে। এসব ঘরে ১০/১১ টি ভাঙাচোরা ব্রেঞ্চ রয়েছে। ঘরগুলো ময়লা স্যাঁতসেঁতে ও দুর্গন্তযুক্ত। দেখলেই মনে হবে বিগত কয়েক বছরেও এখানে কোনো পায়ের ছাপ পড়েনি। এমপিও ভূক্ত হওয়ার পর দু জন পরিচ্ছন্ন কর্মী পরিস্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এসব কাজের তদারকি করছেন নিজেকে অফিস সহায়ক পরিচয় দেয়া মিনহাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি।
এসময় মিনহাজুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তাদের বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণিতে ৪১ জন, সপ্তমে ৩০ ও অষ্টমে ৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট(জেএসসিতে) ৪৯ জন শিক্ষার্থী পরিক্ষা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। তবে ওই অফিস সহকারি কয়েকজন শিক্ষার্থীর পরিক্ষার খাতা ব্যতিত কিছুই দেখাতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বাজারের ওপাশে (প্রায় ৪০০ মিটার দুরে) বাকরের হাট উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকরের হাট দাখিল মাদরাসা আছে। এরপরও শুনতেছি এখানেও নাকি স্কুল হয়েছে।
আসাদুজ্জামান নামে এক সহকারি শিক্ষক জানান, বাকরের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক ভোকেশনালের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন বড় বোন আখতার বানু। তবে এ ব্যাপারে রিপোর্ট না করতে অনুরোধ করেন তিনি।
নিজেকে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সাথে জড়িত থাকার পরিচয় দিয়ে আখতার বানু বলেন, তার স্কুলে শিক্ষার্থীর সংকট নেই। তবে কিছু বাচ্চা নিয়মিত কিছু অনিয়মিত। এমপিও হয়েছে এখন মাটি ভরাট করে ভবন নিমার্ণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকতা শাহ্ মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, ভবন নেই শিক্ষার্থী নেই এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানটির এমপিওভূক্ত হওয়ার মত কোন পরিস্থিতিতে ছিল না। তবে তিন বছরের পরিক্ষার ফলাফল দেখিয়ে এমপিওভূক্ত হয়েছে।