মিরসরাই অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে অনেক দর্শনীয় স্হান রয়েছে। যেখানে স্হানীয় ভ্রমন পিপাসুগন যুগ যুগ ধরে ভ্রমনে বা সময় কাটাতে যেতেন পিকনিক করতেন। তার সাথে গত ১০/১৫ বৎসরে নুতন মাত্রা যোগ হয়েছে। রাষ্ট্রিয় উন্নতির সাথে সাথে ব্যাক্তি উন্নতি রুচির পরিবর্তনে পর্যটন শিল্পের বিকাশ দ্রুত ঘটছে। এখন সবাই ব্যাক্তি বা পারিবারিকভাবে ভ্রমন করার চেষ্টা করেন।
আমাদের অঞ্চলের পর্যটন স্পট গুলো ইন্টারনেট এর কারনে এলাকা ছাড়িয়ে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি পেয়েছে। প্রচুর পর্যটক দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে প্রতিদিন আসে। ভ্রমন পিপাসু এসব দর্শনাথী সব সময় নিয়ম মেনে চলেন এমন নয়। যার কারনে বেশ কয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। অকালে ঝরেছে অনেকগুলো তাজা প্রান। তবে দুর্ঘটনা গুলো চাইলে এড়ানো সম্ভব ছিল।
ঝর্না গুলো অনেক ধাপে বিভাজিত। ট্রেইল বা চলাচল পথ গুলো নিরাপদ নয় ঝুঁকি প্রবন। তাছাড়া ঝর্নার নিচে বা ছরা সমুহে অদৃশ্যমান কুপ রয়েছে বর্ষাকালে বুঝা যায়না।
“সেলফী” সংস্কৃতির কারনে ছরা বা ঝর্নার ধার থেকে কেউ পড়ে গেলে পানির স্রোত যদি কাউকে অদৃশ্যমান কুপে নিয়ে যায় সে আর বের হতে পারেনা এভাবে বিভিন্ন ঘটনায় অনেকে মারা গেছে। তাছাড়া ছরা ঝর্না গুলো পাথর বা শক্ত মাটির আবরন দ্বারা গঠিত এমনিতেই কেউ পড়ে গেলে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা। লোকালয়ে মানে রাস্তায়। “রেল ক্রসিং” প্রায় ক্ষেত্রে অনুমোদিত গেইটম্যান নাই। নিজ দায়িত্বে পারাপার হতে হয়। গেইটম্যান থাকলেও আইন না মানার প্রবনতা আছে গাড়ী বা যাত্রীদের একই অবস্হা গেইটম্যানের। তাই ট্রাফিক আইন অনুসরন এবং সচেতনতাই পারে দুর্ঘটনা রোধ করতে। ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর একে অন্যকে দোষ দেওয়া যাবে তবে ক্ষতি বা জীবন ফিরে আসবে না।
বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক এর আওত্তাধীন খৈয়াছড়া ঝর্না, সোনাইছড়া ঝর্না ও পানি প্রকল্প, নাপিতঢালা ঝর্না, সোনাইছড়ি ঝর্না, বাওয়াছড়া পানি প্রকল্প, রুপসী ঝর্না ও সহস্রধারা ঝর্না ও পানি প্রকল্প এলাকায় গুরুত্বভেদে বিভিন্ন নির্দেশিকা সম্বলিত সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। “বনে কি করা যাবে, কি করা যাবেনা” “দুর্ঘটনা প্রবন এলাকা” ইত্যাদি। এগুলো গুরুত্বের সহিত পর্যটকগন অনুসরন করলে উপকৃত হবে।
“ইকো গাইড” ট্রেইনড কিছু গাইড ছাড়াও স্হানীয়ভাবে গড়ে উঠা গাইড প্রতিটা স্পটে আছে। গাইড না নেওয়ার প্রবনতা লক্ষনীয়। নাপিতঢালার ঘটনায় ঐ পর্টকদের বৈরী আবহাওয়ার কারনে স্হানীয় ভাবে ঝর্নায় না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তারা যেহেতু অতীতেও এ স্পট একাধিকবার ভ্রমন করেছেন তাই মানতে চাননি এবং গাইড নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও তারা গ্রহন করেননি।
“শান্ত ছরা ও ঝর্নার দানবীয় রুপ” সব সময় না হলেও বৃষ্টি বা অতি বৃষ্টিতে ইহা লক্ষনীয়। পর্যটন স্পট গুলো শান্ত মনোরম মনে হলেও বৃষ্টি পরবর্তী রুপ কত হিংস্র হয় তা স্হানীয়রা জানলেও বহিরাগতরা জানার কথা না। তাই বৃষ্টির সময় ভ্রমন না করাই উত্তম। ভ্রমন অবস্হায় বৃষ্টি তে বা ঢল এ আটকা পড়লে খুব ধৈয্য সহকারে নুতন ঝুঁকি না নিয়ে নিচে ফিরে আসাই উত্তম মনে রাখবেন।
অজানাকে জানা এবং অদেখাকে দেখা জীবনের স্বাভাবিক গতি। তারমধ্যে তারুন্য – সেটাতো আরো ভয়ংকর। আমাদের স্হানীয় পর্যটকদের সিংগভাগ তরুন ছাত্রযুবক। তাই এ অঞ্চল দর্শনে এলে সাবধানতা অবলম্বন করবেন। আপনার পরিবার আপনাকে অনেক ভালবাসে মনে রাখবেন।
মোটকথা — (১) গাড়ীতে চলবেন ১০০ ভাগ ট্রাফিক আইন মানবেন।
(২) সর্ব অবস্হায় ধৈয্য ও সচেতনতার সহিত চলবেন।
(৩) ঝর্না বা হিল ট্রেকিং এ গেলে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা জানার ও মানার চেষ্টা করবেন।
(৪) গাইড ছাড়া বন বা ঝর্নায় যাবেন না।
(৫) বৃষ্টির সময় বন বা ঝর্না ভ্রমন করবেন না।
(৬) দুর্ঘটনা প্রবন এলাকা এড়িয়ে চলবেন। অনেক জায়গায় চিহ্নিত করা আছে।
(৭) ঝর্নার উপর দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করবেননা।
(৮) ছরা বা ঝর্নার ঢালে দাড়িয়ে ছবি বা সেলফী তোলার চেষ্টা করবেননা।
(৯) রেল লাইন বা রাস্তা পারাপারে সাবধানতা অবলম্বন করবেন বিশেষ করে রেল লাইন পার হওয়ার সময় গাড়ী থেকে নেমে জান।
(১০) আপনার জ্ঞান বুদ্ধি সর্বক্ষেত্রে কাজে লাগান।
আপনি সৃষ্টির সেরা। আপনাকে আপনার পরিবার দেশ খুব ভালবাসে। নিজের এবং সবার জন্য আপনাকে সুস্হ্যতার সহিত বেঁচে থাকা দরকার। আপনার আমার সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই তো উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বে সুতরাং সচেতনতার বিকল্প নাই। ধন্যবাদ।
সভাপতি
বারৈয়াঢালা ন্যাশনাল পার্ক সহ ব্যবস্হাপনা নির্বাহী কমিটি, চট্রগ্রাম উত্তর বন বিভাগ।