কবিতা- কবে ফিরবে আবার ঝন্টু খোকা
কলমে – রাজ
ছেলে বলে-“মা,তুমি বহুদিন ধরে অসুস্থ। তোমাকে শহরে নিয়ে যাবো চিকিৎসা করাবো।
মা বলে -“নারে, খোকা
তা বুঝি আর লাগবেনা।
মনেহয় আর বেশিদিন বাঁচবো না।
আজকাল কেন যেন মনে লাগে সংশয়?
অযথা করবোনা তোর কষ্টে জমানো অর্থের অপচয়।
পৌষের এই কনকনে শীতে
অসুস্থ মাকে নিয়ে,
চিকিৎসা আর কী করাবে?
থাক বাবা লাগবেনা।
আমি এই বড্ড বেশ ভালো আছি।
খোকা বলে – তা হয়না, মা
মৃত্যু এতো সহজ না।
তা ছাড়া একটা খুশির সংবাদ রয়েছে মা!
চিকিৎসা করাতে রাজি তোমার বউমা জরিনা।
মা মৃদুস্বরে হেসে বলে, “পাগল ছেলে! ”
মা এই দেখো ট্রেনের টিকিট ও কেটে ফেলেছি!
দুজনে আজ রাতে
রুমঝুমপুর রওনা দিচ্ছি।
– মা, হাসে আর হাসে
মনভরে দোয়া করে।
বলে আমার পাগল ছেলে।
আচ্ছা! ঝন্টু তোর কি মনে পরে?
তোর ৭/৮ বছর বয়সের-
সেই কালো জ্বরের কথা।
আমার যখনই মনে পরে
দেহ শিহরণ দিয়ে উঠে-
কলিজায় লাগে ব্যথা।
সে কি ভীষণ জ্বর !
চারদিকে অম্যাবসার অন্ধকার।
আর আমি তোকে নিয়ে পিঠে
চলছি সদর হাসপাতালে!
তুই আমাকে শক্ত করে জাপটে ধরে বললে -“মা, ও মা –
খুব তৃষ্ণা পেয়েছে গো, মা
মরবো এবার বুঝি –
একটু জল পান করবো – মা
এই বুড়ি একটু জল দে তারাতাড়ি। ”
জানিস তোমার এই কথা শুনে আমি ভয়ে চমকে গিয়েছিলাম রে!
তুই আমাকে জাপ্টে ধরে ছিলে জ্বরে পোড়া শরীর নিয়ে!
মায়ের দু-চোখ অশ্রুটলটল
পৌষের শীত চারদিকে ঘন কুয়াশা!
ট্রেনযোগে রুমঝুমপুরে রওনা দিয়েছে মা ও খোকা।
রাত আনুমানিক তিনটা-
রুমঝুমপুর রেল স্টেশনে পৌঁছে তারা।
গভীর রাত কয়েকটি ট্রেনের
ঝিকঝিক শব্দে ধীর গতিতে আসা- যাওয়া ।
খোকা বলে – তুমি ফ্লোরে একটু থাকো শুয়ে মা।
খাবার নিয়ে আমি যাচ্ছি আর জলদি আচ্ছি।
মা বলে- আমার তো খিদে নেই রে, বাবা।
খোকা বলে – তুমি বড্ড বেশি বলো কথা।
তারপর দু’ এক মিনিট অবাক হয়ে!
মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, খোকা।
হাজারো হলে তো গর্ভধারিনী-মা।
– মা বলে – এমন করে কী দেখছিস রে, খোকা?
যা খাবার নিয়ে আয়- যা।
সারাটি পথ ধরে,
তুই কিছুই মুখে দিসনি-রে
যা জলদি যা!
খোকা মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে
– মা বলে খোকা মানিক আমার কী হয়েছে ?
কাঁদছ কেন রে ঝন্টু বাবা?
কিছু না মা, কিছু না- মা, খাবার নিয়ে আসছি,মা।
মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলে- যা, বাবা, যা।
আর শোন ফিরবি তারাতাড়ি –
আমি এখানেই শুয়ে আছি।
প্রচন্ড শীত চারদিকে দিকে ভীষণ কুয়াশা,
কাঁপচ্ছে জুবুথুবু হয়ে শীতে ঠকঠক করে বুড়িমা।
ঘন্টার পরে ঘন্টা অপেক্ষা!
-ফিরবে বুঝি এখনই তার ঝন্টু খোকা।
রাত পেরিয়ে সকাল হলো তবুও ফিরল না খোকা।
মা নির্বাক মা নির্বাক সেদিন হতে আর বলেনা কথা।
উঠে গেছে পৃথিবীর প্রতি সব মায়া মমতা।
কেউ একজন বৃদ্ধাশ্রমে করেছেন সেই মায়ের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্হা।
নেই কোন তবুও সন্তানের প্রতি দোষারোপ
করেন তবুও সন্তানের সুখের জন্য দোয়া।
তুলে দুই হাত খোদার দরবারে করেন ফরিয়াদ
“মোর সন্তানকে রেখো দুধে ভাতে
অভিশাপ দিওনা তারে হে খোদা! ”
আজো অপেক্ষায় সেই দুখিনী বুড়িমা ।
কবে ফিরবে হাতে নিয়ে খাবার আবার তার ঝন্টু খোকা?