কবিতা – কাজের বুয়া টুনি
কলমে -রাজ
আজ শুক্রবার ।
সরকারি ছুটি।
সাহেব ও মেম সাহেবা সোনামণিদের নিয়ে ঢাকায় করবেন ঘুরাঘুরি।
মেম সাহেবা বলল-“এই যে শুনেছো -টুনি ”
– আজ শুক্রবার – সরকারি ছুটি।
প্রতিটি রুম ঝটপট করো পরিস্কার।
সাথে দেখে নিও এক পলক টয়লেটের কি হাল ?
আর শোন! ধুয়ে পরিস্কার করিও সাহেবের কোর্টটি
কিচেনে বাবুকে ভাত বেড়ে দিও তারাতাড়ি।
আজ শুক্রবার ।
সরকারি ছুটি।
আচ্ছা বাবা!
হা! করে তাকিয়ে রয়েছো কি? বলি এতো অলস কেনো তুমি টুনি –
টুনি মাথা নিচু করে বলল – মেম সাহেবা “আমি? ”
হুম তুমি! তোকে বলছি!
তোমার কানে কি যায় না কথা?
মাস শেষ হতে না হতেই মাইনা কি কম নেয় তোর বাবা?
হিসেব কষে পুরো -দুই হাজার টাকা।
তাও আবার কোন সময় একমাসের এডভান্স!
তোমাকে ফাঁকিবাজির আর দেবোনা কোন চান্স।
সাথে নিচ্ছো বছরে দু’দুবার ঈদ পূজায় ছুটি।
কয়েকবার ঈদে দেইনি ছুটি
মাগো কী কান্না কাটি!
বলছি কাজে মন দাও দূর করো ফাঁকিবাজ
বয়স তো আর কম হলো না তোমার বারো পেরিয়ে তেরোর কাছাকাছি।
অবাক হয়ে কি দেখো?
তোমার বাবার হিসেব মতো।
আর শোন চোখ কান খোলা রেখো
যাও গিয়ে দেখো পাশের বাসার শেফালী বৌদির কাজের বুয়া মর্জিনা
কাজ ছাড়া কিছুই বোঝেনা
মর্জিনা কে দেখে কাজ শিখে এসো।
আবার! মুখ হা করে তাকিয়ে আছো ?
টুনি -যাও ছাদ হতে সাহেবের কাপড় চোপর নিয়ে নিচে আসো তারাতাড়ি।
“জী মেম -যাচ্ছি ”
“কোথায় গেলিরে?
মা মোহিনী-রোহিনী!
টুনি – এই টুনি!”
“জী -মেম শুনছি
– রোহিনী মোহিনী খেলছেন লুকোচুরি। ”
” এসো আমার কলিজার টুকরা দুই মামনি!
আজকে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তোমাদের ডেডি খাওয়াবে কাচ্চি বিরানি।
যাও রেডি হয়ে এসো জলদি
-সাথে তুমি ও চলো টুনি। ”
প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও
১০৭ কাজী নজরুল এভিনিউ ঢাকা।।।
জীবনের প্রথমবার টুনির চোখ মুখে অপার বিস্ময় করে খেলা!
হোটেল যে খাবার আয়োজনে ভরা।
মনে মনে ভাবছে টুনি –
ও মাগো খাবার রাজ্য এলাম বুঝি!
যাইহোক আজকে খাওয়া হবে ফাটাফাটি।
হরেক রকম চায়নীজ খাবার তালিকায় নাম না জানা কতো কি?
আজকে খাবো পেট ভর্তি।
হায়! সবাই তো খাচ্ছে
কিন্তু কপালে খাবার জুটলো না কেবল টুনির?
কি করে জুটবে খাবার?
টুনি -সে তো কাজের বুয়া। চতুষ্পদ জন্তুর মতো ওরা।
হোটেলের এক কোণে দাড়িয়ে টুনি চুপচাপ দাড়িয়ে একা!
সন্ধ্যা- পেরিয়ে রাত, গভীর রাত-
আকাশ তারায় তারায় ভরা ।
চলেছে ডিজে পার্টি
শুধু শুকনা মুখে প্রচন্ড ক্ষুধায় লিকলিকে দেহে কাতর টুনি!
ওরা বড়ো সাহেব- সাহেবা
ওরা বড়োই সমঝদার।
কাজের বুয়া টুনিকে খেতে না দিয়ে সামাজিকতা করেছে উদ্ধার।
এবার ছুটিতে বাড়িতে গেলে টুনি।
ছোট্র ভাই মিতুলকে শুনাবে শোনাবে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের খাবার কাহিনি।
বলবে খেয়েছি কাচ্চি বিরানি!
সাথে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলবে খেয়েছি আরো কতো কি ?
তা শুনে ছোট্ট ভাইয়ের চোখে মুখে ফুটে উঠবে এক মহা-বিস্ময়ের ছাপ!
বলবে তুই এতো কিছু খেয়েছিস বুবু বাপরে বাপ!
ছলছল টলমল চোখে টুনি মিথ্যা গল্প শুনাবে কতো আর! নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে তবুও বলবে -টুনি ভীষণ সুস্বাদু ছিল – সেদিনের প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের খাবার!