নাটোরে এক চিকিৎসক ও এক কলেজ শিক্ষিকার অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে ঐ কলেজের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও শহরের সচেতন মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। শহরর জুরে সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য।
তাদের অবৈধ শারীরিক মিলনে সহযোগীতা না করায় একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন সেবিকাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে নাটোর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই সেবিকা। কলেজের সভাপতি ও অধ্যক্ষের নিকটও বিচার দাবী করেছেন ভুক্তভূগী ওই সেবিকা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নাটোর শহরের পশ্চিম আলাইপুর হাফরাস্তা এলাকায় বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন ও নাটোর সিটি কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর ৪০ মিনিট ও ২৮ মিনিটের দুটি অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের দুটি ভিডিও নাটোর শহরের প্রায় সকল মানুষের মোবাইলে মোবাইলে ঘুরছে।
এদিকে, কলেজ শিক্ষিকার আপত্তিকর ভিডিও প্রকাশ হওয়ায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একজন চিকিৎসক ও শিক্ষিকার এ ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পরার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে নিন্দার ঝড় বইছে ।
নাটোরের জেলা প্রশাসকের কাছে এক নারী লিখিত অভিযোগ করে বলেন, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমিনুল ইসলাম লিপন ও নাজমুন নাহার সাথী নাটোর জেনারেল হাসপাতাল নামের একটি বেসরকারি হাসপাতে নিয়মিত অবাধ যৌনাচারে মিলিত হতেন। তিনি এই হাসপাতালে গত ছয় বছর থেকে সহকারি সেবিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাদের অবৈধ কর্মকান্ডে সহযোগীতা না করায় প্রথমে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করে ও জেল খাটানোর হুমকি দেয়। পরে চলতি বছরের ৫মার্চ পরিকল্পিত ভাবে তাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠায়। যে মানুষ বিয়ে বহিঃভূত অবাধ যৌনাচারে লিপ্ত এবং সেটা ভাইরাল হয়ে শহরের সব মানুষের কাছে থাকে তিনি কিভাবে তার দায়িত্বে বহাল থাকেন! তিনি তাদের বিচার দাবী করেছেন।
অপরদিকে, নাটোর সিটি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে কলেজের সমাজ কল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর উপযুক্ত বিচার দাবী করে আবেদন করেছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
নাটোর সিটি কলেজের দুজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কোন শিক্ষক এমনটা করতে পারে তা আমরা কখনো কল্পনাও করতে পারি না। কোথাও মুখ দেখাতে পারছি না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে আমাদের এমন একজন সহকর্মী আছে এটা ভাবতেই আমরা লজ্জা পাচ্ছি। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের সমাজকল্যাণ বিষয়ের প্রভাষক নাজমুন নাহার সাথীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাঃ লিপন এবং আমার মধ্যে চিকিৎসক রোগীর সম্পর্ক । আমি চিকিৎসার জন্য নিয়মিত তাঁর চেম্বারে যাতায়াত করতাম । একপর্যায়ে দুইজনের সম্মতিতে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছে । এ ভিডিও কীভাবে ফাঁস হলো তিনি জানেন না। আমি অভিযোগকারী নারীকে চিনি ও জানিনা। তৃতীয় একটি পক্ষ আমার সুনামক্ষুন্ন করার জন্য এসব অভিযোগ করছে । অপরদিকে নাটোরে বসবাসকারী কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম লিপন বলেছেন, একাধিকবার মুঠোফোনে কল এবং এসএমএস দেওয়ার পরও তিনি রিসিভ করেননি । একপর্যায়ে তাঁর চেম্বারে গেলেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি।
ডাঃ আমিনুল ইসলাম লিপনের ঘনিষ্টজন বলে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ক্লিনিক মালিক জানান,ওই শিক্ষিকা ফেসবুক এবং ফোনে ডাঃ লিপনের সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী করেন। এক পর্যায়ে সে নিজেই ঘনিষ্ট মূহর্তের ভিডিও ধারণ করে এবং স্থানীয় কিছু তরুণকে দিয়ে ভিডিওটি পাঠিয়ে চিকিৎসককে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। মোটা অংকের টাকা না দিলে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পরবর্তীতে মান ইজ্জতের কথা ভেবে চিকিৎসক টাকা দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে। কিন্তু ততক্ষণে ভিডিওটি হাতে হাতে ছড়িয়ে পরে ।
অন্য একটিসূত্র বলছে, শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথীর সাথে ডাক্তার আমিনুল ইসলাম লিপনের মনোমালিন্য হয়। পরবর্তীতে সাথী নিজেই ওই ভিডিওটি রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন ব্যাক্তিদের কাছে পাঠায়। পরবর্তীতে ঢাকায় জেলাযুবলীগ এবং সাবেক ছাত্রলীগের এক নেতার হস্তদক্ষেপে অন্তত ২৫লাখ টাকার বিনিময়ে রফাদফা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওই রফাদফা বৈঠকে থাকা সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা।
ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নাটোর শহরের কোন এক ক্লিনিকে ডাক্তার আমিনুল ইসলাম লিপন এবং শিক্ষিকা নাজমুন নাহার সাথী শরীরিক সম্পর্ক করেন। এসময় সাথি তার মোবাইল ফোন দিয়ে নিজেই গোপনে পুরো ভিডিওটি ধারণ করেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান বিষয়টি খুবই বিব্রতকর মন্তব্য করে আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাজমুন নাহার সাথীর বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ পাওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে কলেজ পরিচালনা কমিটির মিটিং ডেকে শিক্ষিকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি । অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । তদন্ত রিপোর্ট সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।