“টাকাই যেন সবপাপ
মোচনের একমাত্র হাতিয়ার”
-মোহাম্মদ রেজাউল করিম
সহকারী অধ্যাপক,বাঁশখালী কোষ্টাল ডিগ্রী কলেজ।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ জন্মগতভাবে মুসলিম হলেও যুগযুগ ধরে ধর্ম পালন করে আসছে আলেম ওলামাদের দিক নির্দেশিত পন্থায়( এটা আমার ব্যক্তিগত অবজারভেশন)।খুব কম সংখ্যাক মানুষ আছে যারা কোরআন হাদিস গবেষণা করে সঠিক নিয়মাবলি জেনে তারপর সেই অনুযায়ী ধর্ম চর্চা করে কিংবা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। জন্মের পর থেকে আমরা দেখে আসছি আমাদের গুরুজনেরা যেভাবে ধর্ম পালন করে আসছে আমরাও সেভাবেই ধর্ম পালন করে আসছি। উনারা ধর্মীয় এই রীতিনীতিগুলো শিখেছেন কিংবা জেনেছেন আলেম ওলামাদের কাছ থেকে, যাদের কে আমরা ধর্মীয় স্কলার বলে থাকি।
এখন উনারা যদি আমাদেরকে ইসলামের সঠিক পথে পরিচালনা করান,তবে আমরা সঠিক পথে থাকি।আর যদি উনারা যদি আমাদেরকে ভুল পথে পরিচালনা করেন,তবে আমরাও ভুল পথে নিমজ্জিত থাকি তথা বিদাতে লিপ্ত থাকি।এখনও পর্যন্ত ধর্মীয় বিষয়াদির ব্যাপারে আমাদের আস্থা ধর্মীয় আলেমদের উপরই।কিন্তুক সেই আলেমদের আমরা যখন দেখি দুনিয়াবী লোভে পড়ে সত্যের প্রতি অটল থাকার পরিবর্তে সামান্য টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যায় তখন আলেম ওলামাদের প্রতি আমাদের আস্থার সংকট তৈরী হয়, বিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দেয়।
এখন দেখি অধিকাংশ হুজুররা রিজিকের মালিক যে রাজ্জাক তথা আল্লাহ এটা যেন ভূলতে বসেছে।উনারা কিছু আর্থিক সুবিধার আশায় কিংবা নেশায় বড়লোকদের গুনগান এমনভাবে করে কিংবা আল্লাহর কাছে উনাদের ইহকাল পরকালের গুনাহ মাপের জন্য এমনভাবে কঠিন ফরিয়াদ করে যা রীতিমতো চোখে পডার মতো।এখন হুজুররা যাদের দাওয়াতে হাজির হয়ে এই আহজারিটা করে তাদের উপার্জনটা কি আদৌও হালাল নাকি হারাম, সেই দিকে মোটেই উনাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। বর্তমানে অধিকাংশ হজুররা কেমনজানি বিভিন্ন গ্রুপের দখলে চলে গেছে। কেউ বসুন্ধরা গ্রুপ, কেউ কেডিএস গ্রুপ,কেউ পারটেক্স গ্রুপ, কেউ প্যাসিফিক গ্রুপ,কেউ স্মার্ট গ্রুপ ইত্যাদি। আমার কেমনজানি মনে হয় আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের গ্রুপের কেউ নাই।কেননা থাকলে সম্মানিত হুজুর সাহেবরা তথা আলেম সম্প্রদায় সবসময় সবজায়গা সঠিক কথা বলতো।
অসুবিধা কি? না হয় চাকুরী চলে যাবে, না হয় উপরী পাবেন না,না হয় জেল জরিমানা ভোগ করবেন, তাতে কি। পরকালে তথা আখেরাতে তো শান্তি ঠিকই পাবেন, যেখানে অসীম কাল অবস্থান করবেন, যেখানে দুনিয়ায় স্থায়িত্বকাল আখেরাতের তুলনায় কিছুই না। আপনারা কি হজরত বেলাল (রাঃ) এর ঘটনা জানেন না?উনি কিভাবে ইসলাম ধর্মের প্রতি অবিচল ছিলেন।
যদি আপনি বিশ্বাস করেন হায়াত, মৃত্যু, রিজিকের মালিক আল্লাহ। তবে সর্বদা আপনাকে সঠিক কথা বলতেই হবে।না হয় আপনারা মানুষ কে শিক্ষা দিবেন কিভাবে, আপনারা মানুষের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হবেন কিভাবে । এখন আপনি যদি এইকথাগুলো কোন হুজুরসাহেব কে বলেন, তবে উনি বলবেন ভাই এইটা কৌশল। এই যুগে ঠিকে থাকতে হলে হিকমত অবলম্বন করে চলতে হয়।
বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভির সাহেব দেশের শীর্ষস্থানীয় একজন শিল্পপ্রতি এতে কোন ভুল নেই। দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা গ্রুপের অবদানের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। নুসরাত জাহান মুনিয়া নামক একটা নষ্ট মেয়ের সাথে সায়েম সাহেবের একটা ঘটনা মিডিয়ায় বদৌলতে দেশের সচেতন মানুষের প্রায় সবাই জানে। সায়েম সাহেবের ঐ আমলনামা টা এখনো পর্যন্ত ইউটিউবে ঘুরপাক খাচ্ছে। অবশ্য দেশে এই রকম হাজারো সায়েম কিংবা মুরাদ সাহেবরা আছেন যারা টাকার বিনিময়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়এই রকম সৃজনশীল কাজগুলো করে থাকেন । হয়তো দুএকটা ফাঁস হলে মিডিয়ার বদৌলতে আমরা জানতে পারি।
এখন কথা সেটা না, কথা হলো বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিবের মত মানুষরা যখন উনাদের চারিত্রিক সনদে সত্যায়িত করে, উনাদের আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে উনাদের জান্নাত পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে পিটিশন দায়ের করে তখন দেশের সচেতন বিবেকবান মানুষের কপালে একটু চিন্তার ভাঁজ পড়ে।
আমরা শুনেছি শেষ জামানায় মুসলমান নাকি ৭৩ ফেরকায় বিভক্ত হবে,তারমধ্যে একটাই থাকবে সঠিক, যারা হবে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের সঠিক অনুসারী, তারাই হবে জান্নাতি। আর বাকী সবগুলো হবে মিথ্যা এবং তারা হবে জাহান্নামি। এখন আমাদের বায়তুল মোকাররম খতিব সাহেবরা যদি এই পথে থাকেন, তাহলে আমরা কোন গ্রুপে যাব, কাকে অনুসরন করবো।
রোজার মাস অত্যন্ত বরকতময় মাস, রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস।আসুন, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক হেদায়েত দান করে।