শেখ নুরুল আবছার নিসু, চট্রগ্রাম বিভাগীয় প্রধানঃ সাতকানিয়ায় টয়লেটের রিংয়ের ট্যাঙ্ক থেকে এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নারীর নাম শামসুন্নাহার বেগম(২৫)।
আজ সোমবার(১৮ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসার টয়লেটের রিংয়ের ট্যাঙ্ক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার স্বামী রোহিঙ্গা মো. বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শামসুন্নাহার বেগম কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল পেঁচার ঘোনা এলাকার রশিদের বাড়ির মৃত সৈয়দ করিমের মেয়ে এবং তার স্বামী মো. বাবুল কক্সবাজারের উখিয়া জামতলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবদুস শুক্কুরের পুত্র। তারা বিগত দুই বছর ধরে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নয়া পাড়া এলাকায় নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসায় বসবাসত করত।
শামসুন্নাহারের ভাগিনা একরামুল হক বলেন, “বাবুল কিছুদিন আগে আমার মাকে ফোন করে জানান আমার খালা শামসুন্নাহার অসুস্থ। তার কাছে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নাই। এজন্য কিছু টাকা পাঠাতে বলেন। তখন আমার মা খালার চিকিৎসার জন্য বিকাশের মাধ্যমে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা পাঠান। কয়েকদিন যেতে না যেতে বাবুল আবারো ফোন করে জানান আমার খালা খুব বেশি অসুস্থ। তার কাছে চিকিৎসার টাকা নাই। আরো কিছু টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। তখন আমার মা খালাকে মোবাইল ফোন দিতে বলেন কিন্তু খালার স্বামী মোবাইল ফোন দিতে রাজি হননি। নানা অজুহাতে মোবাইল ফোন না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তখন বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এরপর খালার মোবাইল ফোনে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে বাবুলকে অনেকবার ফোন করে খালার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোন দিতে রাজি হননি কিন্তু চিকিৎসার খরচের কথা বলে বারবার টাকা দাবি করেন।”
তিনি আরো বলেন, “তাই গতকাল রবিবার আমি নয়া পাড়া এলাকায় খালার ভাড়া বাসায় আসি। সেখানে বাবুল এবং খালাকে না পেয়ে আমি কেরানীহাটের দিকে যাই। কেরানীহাটে বাবুলের সাথে দেখা হই। তখন তার কাছে খালা কোথায় আছে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালে আছে বলে জানান। পরে তাকে নিয়ে আশশেফা হাসপাতালে যাই কিন্তু সেখানে খালাকে পাইনি। তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন এখানে নয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ(চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে যাওয়ার পর দেখি খালা নাই। এরপর বাবুলকে নিয়ে আমি কক্সবাজার চলে যাই। কক্সবাজারে পৌঁছার পর আত্মীয়-স্বজনরা চাপ প্রয়োগ করলে বাবুল জানান, আমার খালা মারা গেছেন। দোহাজারী শঙ্খনদীর পাড়ে দাফন করা হয়েছে। তখন তাকে আমাদেরকে কবরটি দেখাতে বললাম। বাবুল কবর দেখাতে রাজি হননি। কবর দেখানোর কথা বলে আমাদেরকে কক্সবাজার থেকে আবার শঙ্খনদীর পাড়ে নিয়ে যান কিন্তু সেখানে কোনো কবর দেখাতে পারেননি। এরপর আমরা বাবুলকে নিয়ে সাতকানিয়া থানায় যাই। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বাবুল জানান আমার খালাকে মেরে টয়লেটের পরিত্যক্ত রিংয়ের ট্যাঙ্কের ভেতর ফেলে বালি চাপা দেয়া হয়েছে।”
একরামুল হক বলেন, “পরে সাতকানিয়া থানা পুলিশ বাবুলের দেখানো মতে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নয়া পাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসার টয়লেটের পরিত্যক্ত রিংয়ের ট্যাঙ্ক থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় আমার খালার মরদেহ উদ্ধার করে।”
তিনি আরো জানান, বাবুল স্বীকার করেছে গত ১৪ তারিখে তিনি আমার খালাকে হত্যা করে টয়লেটের রিংয়ের ট্যাঙ্কের ভেতর ফেলে বালি চাপা দেন।
সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়ার নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসার পার্শ্ববর্তী টয়লেটের পরিত্যক্ত রিংয়ের ভেতর থেকে শামসুন্নাহারের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত স্বামী মো. বাবুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।