ফিরোজ উদদীন বাদলঃ
একটি দুর্ঘটনা- একটি পরিবারের সারা জীবনের কান্না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু তছনছ করে দেয় একটি পরিবারের স্বপ্ন, আশা- ভরসা, সবকিছুই।
জোরারগঞ্জ থানাধীন মধ্যম সোনা পাহাড় গ্রাম। পাশ ঘেঁষে চলে গেছে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বাবা- মা, তিনবোন নিয়ে রাজুদের সংসার। ভালো নাম ইব্রাহিম রাজু। ছোট দু’বোনের বিয়ে হয়েছে ইতোমধ্যে। এখনো অবিবাহিতা একজন। বাবা মহি উদ্দিন সামান্য কৃষক। বয়স হয়েছে। এখন আর আগের মতো খাটতে পারেন না। অনেক কষ্টে ছেলেকে অনার্স পাশ করিয়েছেন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও ছেলেটি ভালো রেজাল্ট করে স্থানীয় নিজামপুর সরকারি কলেজ থেকে। তারপর, উঠেপড়ে লাগে সংসারের হাল ধরতে। স্থানীয়ভাবে সামান্য ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করে। অল্পদিনেই পরিবারের নূন্যতম আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। নিজের উপার্জনে ছোট দু’বোনের বিয়ে দেয়। বাকি বোনটির বিয়ে দিয়ে নিজেও সংসারী হবার স্বপ্ন দেখে। জীবনে প্রথম কুরবানি দেয়ার জন্য গরু কিনে। কিন্তু, রাজুর আর কুরবানি দেয়া হলোনা। কুরবানির গোশত খাওয়া হলোনা। ঈদের আগের রাতেই দুষ্কৃতকারীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয় রাজু নামের সুদর্শন ছেলেটি। খুনিরা শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি। পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠে। তার হাত পায়ের রগ কেটে দেয়! মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়! সময় টিভি’র রিপোর্টিং এর বদৌলতে দেশবাসী দেখেছে- একমাত্র পুত্রহারা বাবা-মা, ভ্রাতৃহারা তিনবোনের করুণ আহাজারি, জানাজায় সমবেত হাজারো মানুষের কান্নার রোল।
রাজুর বাবা- মা তাদের একমাত্র ছেলেকে আর কখনো ফিরে পাবেনা। বোনেরা ফিরে পাবেনা তাদের একমাত্র আদরের ভাইকে। কিন্তু, তারা রাজু হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। ভবিষ্যতে যেনো আর কোনো রাজুর মায়ের কোল এভাবে খালি না হয়।