সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম- গত পরশু কাকডাকা ভোরে বিএনপি নেতা নুরুল আমীন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মিঠাছরা বাজারে সরকার বিরোধী একটি বড়সড় ঝটিকা মিছিল হয়ে গেলো। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি যে কোথাও মিছিল- সমাবেশ করতেই পারে, এতে দোষের কিছু নেই। এটা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারও বটে। কিন্তু আওয়ামীলীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের অভিযোগ- মিছিল থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে কুৎসিত- কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেয়া হয়েছে। আমি সে বিতর্কে যেতে চাইনা।
বস্তুত, রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা, নেতৃত্ব সংকট সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দলটির তৃণমূল কর্মীরা হঠাৎ করে এতোটা চাঙ্গা হয়ে ওঠার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে- তা নিয়েও জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরেও। আওয়ামিলীগের ত্যাগী ও সুবিধাবঞ্চিত নেতাকর্মীরা মীরসরাইর মাটিতে বিএনপি – জামাতের উত্থানের জন্য বরাবরের মতো দায়ী করে চলেছেন কিছুসংখ্যক চাটুকার- সুবিধাভোগী নেতৃত্বকে।
বিষয়টি আমি একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করছি। উপজেলা সদর, বারৈয়ার হাট পৌর সদর সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক জায়গা থাকতে বিএনপি মিছিল করার জন্য সর্বপ্রথম মিঠাছরা বাজার কে কেন বেছে নিলো!
একটু পেছন ফিরে দেখা যাক- ৯ নং মীরসরাই ইউনিয়নের মধ্যেই মিঠাছরা বাজারের অবস্থান। এটি এমনই এক জায়গা- যেখানে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে, সমগ্র পূর্ববাংলা যখন নৌকার গণ জোয়ারে ভাসছিল- ঠিক তখনই ‘জামায়াতে ইসলামী’ মিঠাছরা মাদ্রাসা মাঠে এক জনসভার আয়োজন করে এবং সেই জনসভা থেকেই আওয়ামিলীগের নির্বাচনী মিছিলে হামলা চালানো হয় এবং হামলায় সেদিন আওয়ামিলীগের বহু নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস নিরীহ বাঙালিদের বাড়ি থেকে তুলে এনে এ মিঠাছরার অদূরেই মীরসরাই রেলস্টেশন সংলগ্ন বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করেছে।
কথিত আছে- একটি রাইফেলের গুলি ক্রয়ে সরকারের তখন ব্যয় হতো সাড়ে চার টাকা। পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সাশ্রয়ের জন্য এই মিঠাছরা (মীরসরাই) এলাকারই একজন কুখ্যাত জামাত নেতা, রাজাকার আজহারুস সোবহান মাথাপিছু দুই টাকা চার আনায় অর্থাৎ গুলির চাইতে অর্ধেক কম খরচে শতশত মুক্তিকামী মানুষকে জবাই করে হত্যার ঠিকা নিয়েছিল।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- হয়তো সেই ঐতিহাসিক ঘটনারই ধারাবাহিকতায় বিএনপির ব্যানারে সেই চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী চক্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার উৎখাতের আন্দোলনের শুভ সূচনা করেছে- এই মিঠাছরা থেকেই।
ফিরোজ উদ্দীন বাদল, লেখক,কবি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।