না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশের একজন ভাষা সৈনিক, পরমাণু বিজ্ঞানী ও লেখক ড. জসীম উদ্দিন আহমেদ।
তিনি ১৯৩৩ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গালিয়ারচরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে রচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ও আবুল বরকত একই মিছিলে ছিলেন।পরিস্থিতির মোকাবেলা করার জন্য পুলিশ মিছিলে গুলি চালিয়েছিল তার শরীরের নিকট দিয়ে অনেক গুলি বেরিয়ে গিয়েছিল। তার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন আবুল বরকত।
জসীম উদ্দিন আহমেদ ১৯৫৬ সালে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন।এরপর, তিনি উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন। সেখান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন।তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকার আণবিক শক্তি কেন্দ্রে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে তিনি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থায় যোগদান করেন পরবর্তীতে, তিনি প্রতিষ্ঠানটির পারমাণবিক বিকিরণ নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।তিনি ১৯৯৪ সালে ঐ পদ থেকে অবসরগ্রহণ করেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা, ভিয়েনা ও অস্ট্রিয়াতে তিনি পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।জাতিসংঘের ৪৪টি সদস্য রাষ্ট্রের কারিগরি উপদেষ্টা হিসেবে বিশ্ব ভ্রমণ করেন।
জসীম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য প্রেমী। তিনি প্রায় ৩৬ টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে- আমাদের সংগ্রাম ও প্রেরণা, আমার দেখা একুশে ফেব্রুয়ারী, মানব ও মানবতা। ছড়া ও কবিতার বইয়ের মধ্যে- মনের কবিতা, ছড়ার বাগান, কবিতা সম্ভার, প্রেমের কবিতা, কবিতা তরঙ্গ, তিনজন কবির কালজয়ী কবিতা, কবিতায় জীবন বিচিত্রা। তাছাড়া ইংরেজী ভাষায় অনুদিত বই- Poems Of Love, My Twenty First (Bengali Language, Bangladesh), Human And Humanity উল্লেখযোগ্য।তিনি ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এটিএন বাংলায় প্রচারিত নৈশব্দ যোদ্ধা শিরোনামের একটি টিভি নাটকে অভিনয় করেছিলেন।
গত বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর ২০২২) ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দরিদ্রদের সাহায্য ও শিক্ষিত করতে তিনি ওয়াজউদ্দিন ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কুমিল্লায় তার গ্রামে একটি এতিমখানা, একটি স্কুল ও মসজিদ স্থাপন করেছেন।তিনি বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন।
ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য ২০১৬ সালে তাকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছিল। আমরা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
মোঃ সুমন মিয়া, লেখক (গহীনে শব্দ কাব্যগ্রন্থ)
পরিচালক, বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশন