মির্জা তাশাদুল ইসলাম
চাকমা হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়। তারা মূলত নিজেদেরকে ‘চাঙমা’ বলে পরিচয় দেয়। বিশেষ করে তারা পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, এবং চট্টগ্রামে বাস করে। তবে চাকমাদের প্রধানত খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবান জেলায় অধিক দেখা যায়। এছাড়াও ভারতে বিশেষ করে অরুণাচল, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা রাজ্যেও চাকমা বাস করে। বর্তমানে প্রায় ৭ লক্ষ্যের অধিক চাকমা আদিবাসী রয়েছ।
চাকমাদের সংগ্রাম ও ইতিহাস:
চাকমা মৌখিক ইতিহাস অনুসারে, চাকমা উপজাতিটি ত্রিপুরার চম্পকনগর থেকে বার্মার পশ্চিমাঞ্চলীয় পার্বত্য অঞ্চল আরাকানে চলে আসে। যেখানে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে বাস করছিল। ষোড়শ শতকের দিকে তারা উত্তর দিক দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে এবং বাংলার শাসক নবাব তাদেরকে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেয়।
আনুমানিক ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে পর্তুগিজ মানচিত্র প্রণেতা লাভানহা অঙ্কিত বাংলার সর্বাপেক্ষা পুরাতন মানচিত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব চাকমাদের সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায়। কর্ণফুলি নদীর তীর বরাবর চাকমাদের বসতি ছিল। চাকমাদের আরও আগের ইতিহাস সম্পর্কে দুটি তাত্ত্বিক অভিমত প্রচলিত। উভয় অভিমতে মনে করা হয়, চাকমারা বাইরে থেকে এসে তাদের বর্তমান আবাস ভূমিতে বসতি স্থাপন করে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তাত্ত্বিক অভিমত অনুযায়ী, চাকমারা মূলত ছিল মধ্য মায়ানমার ও আরাকান এলাকার অধিবাসী। এ ছাড়াও তারা চট্টগ্রাম ও আরাকানের পাহাড়ি অঞ্চলে এককালে বসবাসকারী সাক (চাক, ঠেক) নামে এক জনগোষ্ঠীর সঙ্গেও সম্পর্কিত ছিল। অপর তাত্ত্বিক অভিমতটির সমর্থনে কোনো ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। এ অভিমতে বলা হয়, চাকমারা উত্তর ভারতের চম্পকনগর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অভিবাসী হিসেবে আসে। আঠারো শতকের শেষের দিকে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলই নয় বরং আজকের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলিতেও তাদের বিক্ষিপ্ত অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।
ব্রিটিশরা চাকমা উপজাতির সাথে হস্তক্ষেপ বিহীন নীতি অনুসরণ করেছিল কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজমান অস্থিরতায় অবশেষে চাকমা অঞ্চল সরাসরি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বাধ্য করে। এমতাবস্থায় কোম্পানি পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনের জন্য বিভিন্ন বিধি-বিধান আরোপ করে।
১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় রাজনৈতিক শক্তি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে চলে গেলে ব্রিটিশরা চাকমা অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট করে এবং চাকমা রাজার কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক ধার্য করা ‘করের’ পরিমাণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে এক পর্যায়ে চাকমা রাজা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অতপর ১৭৮৭ সালে চাকমা রাজা জানবক্স খান এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসিত হয়।
১৮৬০ সালে সরকার পার্বত্য অঞ্চলের নিম্ন এলাকায় জুমচাষ নিষিদ্ধ করলে চাকমা চাষিরা (আরও অন্যান্য পাহাড়ি চাষি যেমন, মারমা সম্প্রদায়ের লোকেরাও) পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্বাঞ্চলে সরে যায়। ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম কোনো রাষ্ট্রের অংশ ছিল না, যদিও উত্তরে ত্রিপুরা, দক্ষিণে আরাকান ও পশ্চিমে বাংলার বিভিন্ন রাজশক্তি শাসনের কেন্দ্রগুলিতে ক্ষমতার টানাপোড়েনে অঞ্চলটি নানাভাবে প্রভাবিত হয়। সতেরো ও আঠারো
শতকে মুগল রাজশক্তি এদের কাছ থেকে স্থানীয় মধ্যস্থদের হাত দিয়ে নজরানা হিসেবে তুলা আদায় করত। আর এসব আদিবাসী মধ্যস্থদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন চাকমা প্রধান, যার নিবাস ছিল কর্ণফুলি নদীর তীরে। চট্টগ্রামের সমতলভূমিতেও এ চাকমা প্রধানের বেশ বড় আকারের পারিবারিক ভূ-সম্পত্তি ছিল। এ সম্পত্তি ছিল মুগল এলাকার অভ্যন্তরে। তিনি সেখানেই তথা আজকের চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় বাস করতে থাকেন।
চাকমারা মুগল সরকারের সঙ্গে বন্ধুভাবাপন্ন ছিল কারণ কেবল সুতার ওপর কিছু শুল্ক ছাড়া তাদের ওপর আর কোনো রাজস্ব ধার্য করা হতো না এবং তাদের সম্পুর্ণ স্বায়ত্তশাসনসহ নিজস্ব জীবন-পদ্ধতি অনুসরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ১৭৩৩ সালে চাকমা প্রধান শেরমাস্ত খান চাকলা রাঙ্গুনিয়া এলাকার জন্য জমিদারি সনদ লাভ করেন। এই এলাকাটি পাহাড়ি এলাকা হলেও চাষাবাদযোগ্য ছিল। জমিদার হওয়ার কারণে চাকমা প্রধান সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন। পুরাতন স্বায়ত্তশাসন নীতি পরিবর্তন করে উপনিবেশিক সরকার চাকমাদের সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তাদেরকে নগদ অর্থে রাজস্ব প্রদান করতে বলা হয়। রাঙ্গুনিয়া জমিদারি এলাকায় খাজনা-হার বৃদ্ধি করা হয়। চাকমা রাজা জুয়ান বক্স বর্ধিত খাজনা প্রদান করতে অস্বীকার করলে রাঙ্গুনিয়া তালুক কলকাতার এক বেনিয়ার নিকট ইজারা দেওয়া হয়। রাজার খাজনা-মুক্ত এলাকা পুনরায় চালু করা হয়। এসব পদক্ষেপ পাহাড়ি লোকদের সরকার থেকে এরূপ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে যে, তারা ১৭৭৬ সালে রাজার দেওয়ান রানু খানের নেতৃত্বে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করে। পাহাড়ি এলাকা থেকে কোম্পানিকে উৎখাত করার জন্য রানু খান গেরিলা কৌশল অনুসরণ করেন। ‘আঘাত কর এবং পালিয়ে যাও’ ছিল তাদের যুদ্ধের কৌশল। রানু খান ছিলেন সর্বোচ্চ সামরিক নেতা। তার অধীনে ছিল বেশ কয়েক জন কমান্ডার এবং এই কমান্ডারদের অধীনে ছিল সেনাবাহিনী। এই সেনাবাহিনীর সৈনিকদের পালওয়ান বলা হতো; এদের অধিকাংশ ছিল কুকি সম্প্রদায়ের। সরকারি নথিপত্র থেকে জানা যায় যে, জুয়ান বক্স ও রানু খান সম্পূর্ণ পাহাড়ি এলাকা ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন করেছিলেন।
এছাড়া তারা সমগ্র রাঙ্গুনিয়া এবং পার্শ্ববর্তী সমতল এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করতে চেষ্টা করেন। চাকমাদের প্রাক্তন জমিদারির অন্তর্ভুক্ত রাঙ্গুনিয়া এলাকাই ছিল তাদের আকস্মিক আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যস্থল। ১৭৭৭ সাল থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তাদের অধীনে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তিনটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান চালানো হয়, কিন্তু তাদের দমনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিদ্রোহী চাকমাদের দমনে ব্যর্থ সামরিক অভিযানের প্রতিবেদন তুলে ধরে চট্টগ্রামের প্রশাসক গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসকে লেখেন: রান (রানু খান) নামের লোকটি যেহেতু কখনোই তেমন কোনো পদমর্যাদাধারী বা বিবেচনায় নেওয়ার মতো ব্যক্তি ছিলেন না, তাই আশাবাদী ছিলাম তার লোকজনকে ধরা সম্ভব হবে এবং সে সঙ্গে তার অপকৌশল এবং কর্মকান্ডও বন্ধ হবে। কিন্তু এ প্রচেষ্টা ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। লোকটি তার নিয়মিত আস্তানা থেকে পালিয়ে যায়, আর তাঁর বিরুদ্ধে পাঠানো ৫০ জন সিপাহি প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। তারা শত্রুদের ধরার জন্য তাড়া করে, যে দুই-তিনটি পাহাড়ি এলাকা এবং গ্রামে তারা লুকিয়েছিল সেগুলি দখল করে পুড়িয়ে ফেলা হয়। কিন্তু তাকে দমন করতে এ সব যথেষ্ট ছিল না। সে আরো প্রচুর সংখ্যক লোক জমায়েত করে, পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র না থাকা সত্ত্বেও তারা অভিযানরত সিপাহিদের ঝামেলায় ফেলতে সক্ষম হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমান্ডিং অফিসার ক্যাপ্টেন এলারকার গতকাল সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেন। বর্তমানে সেখানে ১১৫ জন সিপাহি বিপুল সংখ্যক কুকিদের সঙ্গে লড়াই করছে। রুনো কন (রানু খান)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে আসা এই কুকিরা পাহাড়ের গভীরে বসবাস করে, তারা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার জানে না, কাপড়-চোপড়ও পরিধান করে না।
সিলেট অঞ্চলের মতোই চাকমাদের প্রতিরোধ দমনেও প্রথমে পাহাড়ি লোকদের তাদের নিয়ন্ত্রিত সমতল ভূমির পরগনাগুলি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে মীমাংসার জন্য তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু চাকমাদের নেতা কোম্পানির সঙ্গে কোনো প্রকার আপোস-মীমাংসায় রাজি না হওয়ায় আরো কঠোর ও অমানবিক কৌশল গ্রহণ করা হয়। তা হলো – শুটকি মাছ, লবণ, মাটি ও লোহার তৈরি তৈজসপত্র, মুদিখানার জিনিসপত্র, মসলা ইত্যাদির সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া। পাহাড়ি লোকজন এসব দ্রব্যসামগ্রীর জন্য সমতল ভূমির পরগনার উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল। তবে এই অবরোধ তেমন সফল হয় নি, কারণ বিদ্রোহীরা ভিন্ন পথে এসব দ্রব্যের বিকল্প সরবরাহের ব্যবস্থা করে নেয়। তারপর সিলেটের দৃষ্টান্ত অনুসরণে চট্টগ্রামের প্রশাসন বিদ্রোহী নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে তাদের মধ্যে একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে অন্য পক্ষকে পরাজিত করার উদ্যোগ নেয়। গুপ্তচরের মাধ্যমে চাকমা রাজা জুয়ান বক্সের মনে এমন ধারণা সৃষ্টি করা হয় যে, যুদ্ধের পর রানু খান ধীরে ধীরে আরো শক্তিশালী হবে এবং রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইবে। তাদের এই কৌশল কার্যকর হয়। রানু খানকে না জানিয়ে জুয়ান বক্স সরকারের সঙ্গে গোপনে আলোচনার উদ্যোগ নেন। ফলশ্রুতিতে গভর্নর জেনারেল জুয়ান বক্সকে আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানান এবং রাজনৈতিকভাবে এই বিরোধের নিষ্পত্তির আহবান জানান I
১৯৩০-এর দশকে ভারত সরকারের আইনে এ অঞ্চলকে মূলভূমি-বহির্ভূত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৭-এ দেশ বিভাগের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্ব পাকিস্তানে যুক্ত হয় এবং এ সুবাদে ১৯৭১-এ তা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানাভুক্ত হয়। তবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ প্রশাসনিক মর্যাদা বহাল থাকে। ১৯০০ সালের প্রবিধান কখনও স্পষ্টত বাতিল করা হয় নি, যদিও তাতে ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন পরিবর্তন ঘটানো হয়। এ কারণে, চাকমা প্রধানের পদ আজও অস্তিত্বশীল। ১৯০৬ সালে কর্ণফুলি নদীর পানিপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। তবে সেটির বাস্তবায়ন ১৯৫০-এর দশকে এসে সম্ভব হয়। এ সময়ে রাঙ্গামাটির কাছে নদীর তীরবর্তী গ্রাম কাপ্তাইয়ে এক বিরাট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৬০-এ কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ সম্পূর্ণ হলে কর্ণফুলি নদীর উপত্যকা এলাকায় এক বিরাট হ্রদের সৃষ্টি হয় আর তার ফলে বহু গ্রাম জলপ্লাবিত হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় সেখান থেকে চাকমাদের বড়রকমের দেশান্তর বা অন্যত্র গমন যাকে চাকমারা বড় পারাং বলে থাকে। আনুমানিক ১,০০,০০০ লোক কর্ণফুলির এ কৃত্রিম প্লাবনের কারণে অন্যত্র চলে যায়। এদের অধিকাংশই ছিল চাকমা জনগোষ্ঠীর লোক। এভাবে স্থানচ্যুত অনেকেই সংরক্ষিত বনাঞ্চলে এবং জেলার অন্যত্র বসতি স্থাপন করে। তবে ১৯৬৪ সালে হাজার হাজার চাকমা ভারতে আশ্রয় নেয়। প্রথমে পাকিস্তান আমলে ও পরে বাংলাদেশে চাকমাদের মাঝে এমন ধারণা গড়ে ওঠে যে, তাদের অভাব-অভিযোগের প্রতি কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নন।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশের উপজাতিদের অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ‘‘শান্তি বাহিনী’’ গঠন করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ইউনাইটেড পিপলস পার্টির সামরিক শাখার নাম ছিল এই শান্তি বাহিনী। এই সংগঠন বহু বছর ধরে তাদের নায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টোগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান শন্তু লারমার সাথে একটি চুক্তিতে পৌছান।
উৎপত্তি ও ইতিহাসঃ মগদের মতে, চাকমারা মুঘলদের বংশধর। এককালে মুঘলগণ আরাকানের হাতে পরাজিত হলে আরাকান রাজ তাদের বন্দী করে আরাকানী নারীদের সাথে বিবাহ দেন। এসব মুঘল সৈন্যের ঔরষে- আরাকানী নারীদের গর্ভে যে জাতির উদ্ভব হয়েছিল তারাই সাক বা সেক। রাধামোহন ধনপতি উপাখ্যানে বর্ণিত হয়েছে চাকমারা চম্পক নগরে বাস করতো ।
কর্নেল ফায়ার তার হিস্টরি অফ বার্মা গ্রন্থে বলেন চাকমারা এককালে ব্রহ্মদেশ দেশের অধিবাসী ছিল। স্যার রিজলে বলেন সাক বা সেক জাতি থেকে চাকমাদের উৎপত্তি। আরাকানের রামাবতী নগরের নিকট সাক বা সেক জাতির বাস ছিল। আর রামাবতী নগর হচ্ছে আরাকানের প্রাচীন রাজধানী।
ক্যাপ্টেন হার্বাট লুইন এর মতে এককালে চাকমারা মুসলমান ছিল।
মগদের মতে চাকমারা মোগলদের ঔরসজাত। কোন এক কালে আরাকান রাজ্যের নিকট মোগলরা পরাজিত হয় এবং অনেক মোঘল সৈন্য বন্দি হয়। এসমস্ত বন্দি মোগল সৈন্যরা পরবর্তীকালে আরাকান থাকতে বাধ্য হয় এবং রাজার নির্দেশে আরাকানী মেয়েদের সাথে মুঘল সৈন্যদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাদের ঔরসজাত সন্তানরাই সাক্ বা সে্ক নামে পরিচিত।
চাকমারা নিজেদেরকে শাক্য বংশজাত বলে দাবি করেন। চাকমা সমাজের একটি গানে নূর নগর এর কথা উল্লেখ আছে। পার্বত্য ত্রিপুরায় এ নূর নগর অবস্থিত। তারা গোমতী নদীর উৎস কে পবিত্র মনে করে।
এক চাকমা রাজপুত বার্মার আরাকানের কিছু অঞ্চল নবম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত শাসন করে। অতঃপর স্থানীয় আরাকানীদের দ্বারা বিতাড়িত হয়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাস শুরু করে।
চাকমা নামকরণঃ বয়স্ক শিক্ষিত চাকমারা নিজেদের জন্য চাকামা নামটি ব্যবহার করে। তবে তাদের বৃহত্তর গ্রামবাসীরা চাকমা নামেই নিজেদের পরিচয় দেয়। নৃ-তাত্ত্বিক রিজলের মতে, সাক বা সেক জাতি থেকে চাকমাদের উৎপত্তি। ক্যাপ্টেন লুহন বলেন, “The name chakma, probably has been given by the inhabitants of Chittagong.”
চাকমা জনসংখ্যাঃ বাংলাদেশে উপজাতিদের মধ্যে জনসংখ্যার দিক দিয়ে চাকমারা সর্বাধিক। চাকমাদের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে কোনো সঠিক উপাত্ত পাওয়া যায় না। তবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেব অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ১৯৫৬-তে ১,৪০,০০০ ও ১৯৮১-তে ২,৩০,০০০ ছিল বলে জানা যায়। ১৯৯১ সালে করা এক আদমশুমারিতে দেখা যায় বাংলাদেশে প্রায়, ৩,৪০,০০০ জন চাকমা বাস করে। তবে বর্তমানে তা তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করা হয়। চাকমারা বাংলাদেশের মোট উপজাতীয়দের প্রায় অর্ধেক। ১৯৩১ সালের আদমশুমারির সময় তাদেরকে প্রথমবারের মতো দেখানো হয় আদিম উপজাতি হিসাবে।
চাকমাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য: ডক্টর জে. এইচ,হাটন বলেন চাকমারা মঙ্গলয়েড নরগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। চাকমাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলো স্বাস্থ্য নাদুস-নুদুস,মুখে দাড়ি গোঁফের প্রাচুর্য কম,নাক চ্যাপ্টা, চোখের পাতা সামনের দিকে ঝুলে থাকে, চোখ কুতকুতে । চাকমারা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান।
গোষ্ঠী জীবনঃ চাকমা সমাজ বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত। প্রায় একশত পঞ্চাশটি গোষ্ঠী নিয়ে চাকমা সমাজ গঠিত। গোষ্ঠীভুক্ত লোকেরা আত্মীয় সম্পর্কে আবদ্ধ। তারা জাতিভিত্তিক সমাজের মানুষ। গোষ্ঠীগুলো আবার বিভিন্ন গোছার অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন গোছা নিয়ে চাকমা সমাজ গঠিত। গোষ্ঠীগুলোর কর্তব্য হলো পরস্পর পরস্পরকে বিপদে আপদে সাহায্য সহযোগিতা করা। তাদের ভ্রাতৃত্ব ভাব খুব প্রবল। গোষ্ঠী প্রধান ব্যক্তির কীর্তিকলাপ ওপর ভিত্তি করে কিংবা বাসস্থানের নাম অনুসারে গোষ্ঠীর নামকরণ করা হয়। যেমন কপালা সাতভাইয়া মানকতুয়া তৈনছরি ইত্যাদি। চাকমারা রাজাকে অনেক সম্মান করে। বর্তমান বাংলাদেশের চাকমা সার্কেলের রাজা দেবাশীষ রায় (জন্ম: ৯ এপ্রিল ১৯৫৯) তিনি একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। তিনি জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে আদিবাসী বিষয়ক সাবেক সদস্য।
জীবনধারন ও অর্থনীতিঃ কৃষি কাজ চাকমাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন। পাহাড়ি অঞ্চলে জুমচাষ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমতল অংশে স্বাভাবিক সেচ পদ্ধতিতে মৌসুমী কৃষি কাজ করে। জুমচাষ পাহাড়ের কতকাংশে গাছপালা কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে তা চাষাবাদের উপযোগী করে তোলা হয়। তারপর সেখানে গর্ত করে বিভিন্ন ফসলের বীজ একত্রে বপন করা হয়। যেমম- ধান, শসা, কুমড়া, মিষ্টি আলু, মরিচ ইত্যাদি। তবে বর্তমানে আউশ, আমন ও ইরি ধানের চাষাবাদও করে। চাকমা সমাজে নারী পুরুষ উভয়ই কৃষি কাজে অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও চাকমারা শিকার করে, মাছ ধরে এবং অন্যান্য কুটির শিল্প সামগ্রী তৈরি করে জীবন ধারন করে।
ভাষা ও সংস্কৃতি: চাকমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, এবং লোককাহিনী রয়েছে। চাকমা ভাষা অন্যন্য উপজাতি গোষ্ঠীগুলির থেকে পৃথক । চাকমারা তাদের নিজস্ব ভাষার সাথে সাথে বাংলা ভাষায়ও কথা বলতে পারে এবং অনেকেই বাংলাদেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষাতেও কথা বলতে সক্ষম। তবে ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, তারা পূর্বে টিবে-টো-বর্মান ভাষা পরিবারভুক্ত আরাকানী ভাষায় কথা বলতো। বাংলাদেশে অন্যান্য উপজাতিদের চেয়ে অনেক বেশি প্রগতিশীল চাকমা উপজাতি। চাকমা ভাষায় লিখিত প্রথম উপন্যাস ফাবো (২০০৪) ।
ধর্ম ও বিশ্বাসঃ চাকমারা ধর্মীয় দিক থেকে থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তারা বৌদ্ধ ধর্মাবলি হলেও তাদের চালচলন নাম গ্রহণ ও আদব কায়দায় মুসলমানি প্রভাব বিদ্যমান। অন্যদিকে তাদের দেবদেবী আলোচনা হিন্দু প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। চাকমা সমাজের রাজাকে দেবতার সম্মান দেওয়া হয়। নৃতত্ত্ববিদ স্যার রিজলির মতে এককালে এরা জড়ো উপাসক ছিল।
চাকমা রাজমহিষী শ্রীমতি কালিন্দী রানী ইসলাম ধর্মের প্রতি বিশ্বাসী ছিলেন এবং ধর্মের অনেক অনুশাসন মেনে চলতেন। পরবর্তীকালে তিনি হিন্দু ধর্ম ও সবশেষে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন।
চাকমাদের বিশ্বাস-বসুমতী, পরমেশ্বর ও পরমেশ্বরী বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। তারা শিব, কালী, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পূজা করে থাকে। চাকমা সমাজের মৃতদেহ দাহ করা হয়। মৃতের জন্য তারা শোক প্রকাশ করে। আত্মার সদগতির জন্য সাব্দাহের সপ্তমীর দিনে শ্রাদ্ধ পালন করে। বৌদ্ধ সাধু ও আত্মীয়স্বজনদের খাওয়ানো হয় ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। চাকমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ সতেরোটি। তাদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে কেবল আগর তারা গ্রন্থটি প্রাচীন পুঁথির মত চাকমা লিপিতে লেখা।
চাকমা উৎসব: চাকমা সমাজে অনেক ধর্মানুষ্ঠান পালিত হয়। যেমন বিষ্ণু, ওয়াছু, ওয়াংলা, মাঘীপূর্ণিমা ইত্যাদি। তাদের উৎসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হচ্ছে বুদ্ধ পূর্ণিমা। তারা মনে করে এই দিনটি গৌতম বুদ্ধের জন্ম মৃত্যু ও বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির দিন। চাকমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব হচ্ছে বিজু উৎসব। । প্রতিবছর বৈশাখ মাসের পূর্ণিমার দিনে এটি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি ৩ ভাগে পালিত হয়। চৈত্রের ২৯ তারিখে ফুল বিজু, ৩০ তারিখ মূল বিজু এবং বৈশাখের প্রথম দিনে গজ্যাপজ্যা বিজু নামে অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এই দিনগুলোতে চাকমাদের ঘরগুলি ফুল দিয়ে সজ্জিত করে। অতিথিদের জন্য ভালো ভালো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়। বিজুর সময় রাঙ্গুনিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় মহামুনি মেলা, যেখানে সমস্ত পার্বত্য উপজাতির লোকদের মিলনমেলা হয়।
উৎসবের দিনগুলিতে চাকমারা জাঁকজমক পোশাক পরে মন্দিরে যায়। সেখানে তারা গৌতম বুদ্ধের প্রতিমায় ফুল, এবং মোমবাতি প্রজ্বলিত করে। সবশেষে পুরোহিতদের কাছ থেকে বুদ্ধের বাণী শুনেন।
তাছাড়া মাঘী পূর্ণিমার রাতে প্যাগোডার প্রাঙ্গণে গৌতম বুদ্ধের সম্মানে ফানুস উড়ায়।
পোশাক-পরিচ্ছদঃ চাকমা পুরুষরা এক রকম মোটা সুতার জামা,ধুতি ও গামছা পড়ে এবং মাথায় এক ধরনের পাগড়ী বাঁধে। নারীরা পিন্ধন, খাদী, খালাং ইত্যাদি পরিধান করে। শিক্ষিত পুরুষেরা শার্ট, প্যান্ট,কোর্ট এবং নারীরা শাড়ি ব্লাউজ থ্রিপিস ইত্যাদি পরিধান করে। চাকমা মহিলারা কোমরের চারপাশে একটি গোড়ালি দৈর্ঘ্যের কাপড় পড়ে যা কোমরের চারপাশে আবৃত থাকে। কোমরে জড়িত কাপড় যা ‘পিনোন’ নামে পরিচিত। চাকমারা হাতে বোনা বিভিন্ন ডিজাইন সমৃদ্ধ কাপড় পড়তে পছন্দ করে। চাকমা নারীরা রুপার অলংকার,পুঁতির মালা ও ঝিনুকের মালার সাহায্যে দেহের শোভাবর্ধন করে।
পরিবার প্রথাঃ চাকমা সমাজ পিতৃপ্রধান। পিতার বংশ পরিচয়ে ছেলেমেয়েদের পরিচয় ও উত্তরাধিকার প্রথা নির্ণিত হয়। বিয়ের পর নারী স্বামীর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়। চাকমা সমাজে পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সন্তানরা সমান হারে সম্পত্তির মালিকানা পায়। কিন্তু কন্যা সন্তান পিতার সম্পত্তির কোন মালিকানা পায়না। তবে পুত্র সন্তান না থাকলে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে থাকে। কোন তালাকপ্রাপ্তা অথবা বিধবা নারীর যদি পুত্র সন্তান থাকে তবে পুত্রসন্তান পূর্ব স্বামীর সম্পত্তির মালিকানা পাবে।
বিবাহ প্রথাঃ চাকমা সমাজে অন্তর্বিবাহ ও বহির্বিবাহ উভয় রীতি প্রচলিত। পূর্বে একই গোছায় বিবাহ নিষিদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা অনেকটা শিথিল।
চাকমাদের মধ্যে বিবাহ প্রথা দুই প্রকার।
(১) বন্দোবস্ত বিবাহ
(২) রোমান্টিক বিবাহ
প্রথম নিয়ম অনুযায়ী ছেলে বিবাহের উপযুক্ত হলে পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনরা কনের খোঁজ করে। কোথাও কোন ফোনের খোঁজ পেলে পিতা-মাতা ও তার আত্মীয়স্বজন এক ঘরোয়া বৈঠকের আয়োজন করে একে নামাং বলে।
রোমান্টিক বিবাহে ছেলে মেয়েরা নিজেদের পছন্দে পলায়ন করে বিবাহ করে (যদি পরিবার রাজি না থাকে) সাধারণত মহামুনি মেলায় এটা বেশি সংঘটিত হয়।
চাকমা সমাজের চাচাতো খালাতো মামাতো ভাই বোনদের বিয়ে সিদ্ধ। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে ছোট ভাই বিয়ে করতে পারে। বড় ভাইয়ের শালীকে ও বোনের ননদকে বিয়ে করার রীতি প্রচলিত আছে। বিবাহবিচ্ছেদ রীতি চাকমা সমাজে প্রচলিত। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দিলে তাদের তালাক ব্যবস্থা হেডম্যান ও দশজন গ্রামীণ মাতব্বরের সালিশের মাধ্যমে করা হয়। যে পক্ষ দোষী সাব্যস্ত হয় তাকে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। চাকমা সমাজে প্রচলিত বিশ্বাস যে পরমেশ্বর ও পরমেশ্বরী হলো বিয়ের দেব ও দেবী।
খাদ্য ও বাসস্থানঃ চাকমাদের প্রধান খাদ্য ভাত, ভুট্টা, শাকসবজি এবং সরিষা ও মদ। মদ এরা নিজেরাই তৈরি করে। চকমারা বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরি করে থাকে। তারা মাটি থেকে প্রায় ছয় ফুট উঁচুতে মাচার উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করে। উপরে উঠার জন্য একটি কাঠের সিঁড়ি থাকে। ঘরটিকে কয়েকটি ছোট ছোট কামড়ায় ভাগ করা হয়ে থাকে। প্রধান কামরাটি সাধারণত ৪০×২৬ ফুট ও অন্যান্য কামরাগুলো ২৫×১৬ ফুট হয়ে থাকে।
শিক্ষাঃ অন্যান্য উপজাতির তুলনায় চাকমারা বেশি শিক্ষিত। তারা বাংলা ও ইংরেজিতে শিক্ষা গ্রহণ করছে। ফলে আজকাল বহু চাকমা সরকারি উচ্চপদে মতো নিয়োজিত।
নেতৃত্বঃ চাকমা সমাজে আদমের নেতৃত্বে কারবারী, গ্রামের নেতৃত্বে হেডম্যান ও চাকমা সার্কেলের নেতৃত্বে থাকেন রাজা। এদের গ্রামকে বলা হয় আদম।
পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বিজ্ঞান ও সভ্যতার স্পর্শ সর্বত্র লাগলেও চাকমাদের প্রাচীন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছু এখনও বর্তমান। তবে চাকমা সমাজ ধীরে ধীরে আধুনিক সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তারা বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য ও চাকুরী করছে। চাকমারা অভিবাসন নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে।
(তথ্যসূত্র গুগোল ও বিভিন্ন একাডেমিক বই)
কলমে – মির্জা তাশাদুল ইসলাম