ভাবনার জানালা__________(?)
ফিরোজ উদ্ দীন বাদল
প্রসঙ্গঃ অনুপ্রবেশের রাজনীতি যুগে যুগে।
বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনা বিরোধী পরিবারের কিছু সদস্য নিজেদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অশুভ লক্ষ্যে সুকৌশলে আওয়ামিলীগে যোগদান করে। অতঃপর নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের মন জয় করে দলের মধ্যে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেছে মর্মে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়শই আলোচনা- সমালোচনা লক্ষ্য করা যায়।
খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক সহ দায়িত্বশীল অনেক নেতাই বিভিন্ন সভা- সমাবেশ, টকশো, সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বিষোদগার করে থাকেন। কিন্তু কোনোরকম ব্যবস্থা নেয়ার খবর জানা নেই। দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রতি হালের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া নেতাদের দৃশ্যমান তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কারণে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলের অভ্যন্তরে একধরণের ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
অনুপ্রবেশকারীরা দলের ঐক্য বিনষ্ট করছে, দলের অভ্যন্তরে বিভাজনের বীজ বপন করছে। দলকে অজনপ্রিয় করে তুলছে- এমন অভিযোগ সম্ভবত ভিত্তিহীন নয়।
গুটিকয়েক সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদকাসক্তকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য, প্রভাব- প্রতিপত্তি বজায় রাখার চেষ্টায় লিপ্ত অনেক সুবিধাবাদী নেতা। বলাচলে, আদর্শিক রাজনৈতিক চেতনাবোধ তাদের মধ্যে অনুপস্থিত। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিই তাদের কাছে শেষকথা।
সেক্ষেত্রে, ত্যাগীরা অপমানে- অভিমানে দলীয় কর্মকান্ড থেকে ক্রমশঃ নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। যা দলের জন্য মোটেই সুখকর নয়। জাতীয় নির্বাচন সমাগত। বিরোধীদের রাজপথ দখলের হাঁকডাক ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ত্যাগীদের পরীক্ষার সময় কিন্তু এখনই। সুবিধাবাদী শ্রেণী কৌশলে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করবেন, এটা জানা কথা। মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার হবেন বরাবরের মতো ত্যাগীরাই।
হৃদয়ে যতো রক্তক্ষরণই হোক না কেন, সকল মান- অভিমান ভুলে প্রয়োজনে চিহ্নিত অনুপ্রবেশকারীদের অস্তিত্ব অস্বীকার করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে উন্নয়ন- অগ্রগতির চলমান ধারাকে অব্যাহত রাখতে এগিয়ে আসতে হবে বস্তুত দলের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের। মনে রাখতে হবে, এই দল আপনার- এই দেশ আপনার। দল বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে দেশ।
তবে হ্যাঁ, ত্যাগীদের প্রাপ্তির খাতা বরাবরের মতো শুন্যই থাকে! সর্বদাই দেখা যায়, সুবিধাবাদীদের পোয়াবারো। এটাই অলিখিত নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত! দল ক্ষমতাচ্যুত হলে অনুপ্রবেশকারী- হাইব্রিডদের অবস্থানের কোনো হেরফের হবেনা। এরা বহাল তবিয়তেই থাকবে। আমে- দুধে ঠিক মিশে যাবে।
জেল- জুলুম, হত্যা, নির্যাতনের শিকার হবে ত্যাগীরাই। দল ক্ষমতায় থাকুক, আর না-ই থাকুক- আঁটি হয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খায় ত্যাগী নেতাকর্মীরাই। এর সবই অভিজ্ঞতা। দৃশ্যমান বাস্তবতাও বটে।
তবুও, ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা সহজে বিস্মৃত হলে চলবেনা। বাংলা ভাইদের উত্থান, একই সময়ে ৬৪ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, সারা দেশে প্রতিটি উপজেলায় লাগাতার খুন- ধর্ষণের কথা কি সহজে ভোলা যায়? ভাবলে এখনো ভয়ে গা শিউরে ওঠে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি কোনো সুস্থ- স্বাভাবিক মানুষের কাম্য নয়।
জানি, সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। দোষত্রুটি- দুর্বলতা আছে বৈকি। তথাপি, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ এখন উদীয়মান বাঘ। সমালোচকরা যা-ই বলুন, উন্নয়নশীল দেশের তকমা বাংলাদেশের গলে। আজকের পৃথিবীতে অপার সম্ভাবনার দেশের নামের তালিকার শীর্ষে বাংলাদেশের অবস্থান। শত প্রতিকূলতার মাঝেও উন্নত দেশের স্বপ্ন জাতির চোখেমুখে।
পাদটীকা- রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় হিমসিম খাচ্ছে গোটা বিশ্ব। আমরাও ভীষণ কষ্টে আছি। অস্বীকার করার উপায় নেই। সাময়িক যাকিছু অসুবিধা- অসঙ্গতি সহসা কেটে যাবে ইনশাল্লাহ। সরকার পরিবর্তন হলে যে, রাতারাতি সমস্যার ম্যাজিক- সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা ভাববারও কোনো অবকাশ নেই। নজিরবিহীন সংকটে নিমজ্জিত বিশ্ব সম্প্রদায়। দুর্গম- দুর্ভেদ্য অন্ধকার রজনীতে গন্তব্য যাত্রায় উত্তাল সাগর পাঁড়ি দিচ্ছে- বিশ্বের কয়েক’শ কোটি মানুষ। বাংলাদেশ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো জনপদ নয়। একথাও আমাদের বুঝতে হবে।