“মানব রোবট -সখিনা “
-রাজ
“বছরে দু’বার ঈদ। ছুটি পেয়েছি মাত্র সাত দিনের । বাসায় যাইতে সময় লাগে দুই দিন ও ফিরতে লাগে দুইদিন হাতে থাকে মাত্র তিন দিন ।আবার যথা সময়ে অফিসে না আসলে ও চাকুরী চলে যাওয়ার একটা ভয় থেকেই যায়।ভোরবেলায় রান্না শেষ করে সকাল ৭ টা হতে বিকাল ৫ টা পযন্ত ডিউটি এবং আরো অতিরিক্ত ৪ ঘন্টা অভার ডিউটি করতে হয় । গড়ে মোট ১৩/১৪ ঘন্টা কাজ করতে হয়। “এবারেও বাড়ি যাওয়া হচ্ছে না ভাই। “- এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন গাবতলী বাস স্টেশনে আসা এক গার্মেন্টস শ্রমিক সখিনা। বাসায় ঈদের জন্য বিকাশে টাকা পাঠালেন উনার বিধবা মাকে কথায় কথায় জানলাম। ওর গ্রামে ৮ বছরের এক ছেলে আছে।ছেলের নাম মিতুল। ক্লাস ২ এ পড়ে।সখিনার স্বামী বিয়ের পরে ফেরারি। বিধবা মায়ের সাথে মিতুল থাকে। গ্রামে কাজ নেই। তাই ৫ বছর ধরে ঢাকায় একটা গার্মেন্টসে এ চাকুরী করে আসছেন । বিধবা মায়ের একমাত্র শেষ ভরসা সখিনা। মাসে ৮০০০ ও ওভার বেতন – ৪০০০ পান। ৩০০০ রুম ভাড়া ও ৩০০০ খাওয়া বাবদ তার চলে যায় । বাকি ৬০০০ টাকা প্রতিমাসে তার মাকে বিকাশে পাঠিয়ে দেন। সখিনার একমাত্র স্বপ্ন এখন মিতুলকে ঘিরে। মিতুলকে ভালো করে পড়াশোনা করিয়ে যেন সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন ও বিধবা মাকে সারাটি জনম দেখতে পারেন। সখিনার আর কোন ভাই বোন নেই। সে মেয়ে মানুষ তাতে কি? সে অনেক পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সে যেমন মিতুলের একজনের বাবার দায়িত্ব পালন করেন পাশাপাশি মায়ের দায়িত্ব ও পালন করেন। পাশাপাশি বিধবা বুড়ি মায়ের কথা আর নাইবা বললাম। স্বামী পরিত্যক্তা একজন মেয়ে জন্য ছেলের চাইতে কোন অংশে কম নয় সখিনা। সখিনা ২ বছর ধরে ঢাকায় হতে কুড়িগ্রামে দেশের বাড়ি যেতে পারেনি ঠিকই কিন্তু সখিনার স্বপ্ন থেমে নেই। ওরা যে তৈরি পোশাক শ্রমিক। ওরা মানব রোবট – ওদের জন্য কীসের ঈদ! কীসের পূজা! ঈদ পূজা এসব তো বড়লোকদের সখিনাদের জন্য না।ওরা তো মানব রোবট।