কোন দিন বলে রান্নার তেল লাগবে।পরেরদিন বলে মাথার তেল আনিও।সকাল হতেই বলে জ্বালানী তেল আনতে ভুল যেন না হয়।
নিশব্দ বিস্ফোরনে মাথাটা গরম হয়ে যায়।তবুও দিনটা ভাল ভালই কাটুক সে চিন্তে নিরুত্তর থেকে মুখ বুঝে থাকি। এই নিরুত্তর থাকার মধ্যেও গিন্নি শান্তনা খুঁজে পায় না। মনে ভরসা জাগে না।সে মনে করে আমি তার কথায় তেমন কর্নপাত করছিনা কিংবা গুরুত্ব দিচ্ছি না।তাই সুউ্চ্চ উচ্চারণে বলে উঠে, কি হল শুনতে পাচ্ছতো? মনে থাকে যেন।অবশেষে অস্ফুট কন্ঠে বলি,তেলের দামের উর্ধগতি একটু কৃচ্ছ্বতা সাধন কর।কার কথা কে শুনে।
একেতো তেলের দামের উর্ধগতি তার উপরে মাত্রারিক্ত তেল খরচে রাতে চোখে ঘুম আসেনা।ফলে তন্দ্রাহীন রাতজাগা চোখের পাতা জুড়ে ঘুম ঘুম ভাব দেখে অনেকেই প্রশ্ন করে কি ভাই, রাতে কি ঘুম হয়নি?
তাদের বলি, তেলের দামের উর্ধগতি জনিত টেনশনে রাতে ঘুম হয়না।
তারা আমায় শান্তনা দিয়ে বলে, এতে টেনশনের কি আছে।সকলের যে গতি তোমারও সেই গতি।
এরি মধ্যে এক বড়ভাই আমার আদ্যপ্রান্ত সব শুনে আমাকে বললো আসলে তোর ঘুম না হওয়ার এটা মূল কারণ নয়।আমাকে আসল সত্যটা খুলে বল।
আমি তাকে এড়িয়ে যেতে পারিনি।তাই তাকে বললাম, আসলে আমার ঘুম আসে না আমার স্ত্রীর কিপটেমির কারনে।বড় ভাইটি জানতে চাইলো তোমার স্ত্রী এমন কি কিপটেমী করলো যে কারনে তোমার রাতে ঘুম হয় না.।
আমি বললাম, যে গৃহে আমি রাতে ঘুমাই সে গৃহের গেইটটা খোলা ও বন্ধ করার সময় এমন বিকট শব্দে আওয়াজ তুলে তাতে ভয়ে আমি বিচানা থেকে লাফিয়ে উঠি।গত রাতেও এমন বিকট বিশ্রী শব্দে আমি কয়েকবার লাফিয়ে উঠি।সারারাত আর ঘুম আসেনি।
বড়ভাইটি বললেন, আরে বোকা,যে গেইটটি খোলা ও বন্ধ করার সময় এমন আওয়াজ করে তোর ঘুম নষ্ট করে তাতো নিমিষেই বন্ধ করা যায়।গেইটটির কব্জায় কিছু তেল লাগিয়ে দেয়।কব্জা ইজি হয়ে যাবে।শব্দও করবেনা, ঘুমও ভাংবে না।
বিষয়টি গিন্নীকে ডেকে বললাম,গেইটের কব্জায় কিছু তেল দাও। তীক্ষ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে গিন্নীর সাফ জবাব একফো্টা তেলও দেয়া যাবে না।জ্বী না। তেলের দাম বেশী।
খানিক চুপ থেকে গিন্নী বললো হ্যাঁ দিতে পারি তবে শর্ত একটাই, তেলের দাম কম বেশ যখন যাহাই হউক, চাহিবা মাত্র ইহা তোমার গিন্নীকে এনে দিতে বাধ্য থাকিলেই কব্জায় কিছুমাত্র তেল দিব।অন্যথায় নয়। সময় মতো গিন্নীও শর্ত জুড়িয়ে দিল।
কি আর করা, গিন্নীর চাহিবা মাত্র আনিয়া দিবার শর্তটুকু সজ্ঞানে,সুস্হ্য মস্তিষ্কে মেনে নেবার জবাব দিতে না দিতেই এক নিকট বন্ধু উদ্ভ্রান্তের মতো আমার পাশে এসে হাজির।তাকে অকস্মাৎ দেখে জিজ্ঞাস করলাম কি রে কি হয়েছে।তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?ঘটনা কি খুলে বলতো। সে বললো কয়টা টাকা দেয়।তেল কিনতে হবে। আমি জানতে চাইলাম তোর আবার তেলের কি দরকার।সে জবাবে বললো দোস্ত, কিছু কিছু মানুষকে তেল মারতে মারতে এখন এমন অবস্হায় পৌঁছে গেছি, এখন রোজ কাউকে না কাউকে তেল মারতে না পারলে অস্হির লাগে। রাতে ঘুম হয়না।
বুঝে নিতে আমার অসুবিধা হয়নি যে বন্ধুটি মালিশ রোগে আক্রান্ত।সুতরাং গিন্নীকে আর দোষ দিয়ে কি লাভ।কেননা আজকাল প্রায় সকলেই চায় তৈলে তৈলাক্ত হতে।
ব্যবধান শুধু ব্যাবহার বা প্রয়োগের অথবা লক্ষ্য কিংবা উদ্দিশ্যের।
কেননা
কেউ চায় রান্নার তেল।
কেউ চায় মাথায় ব্যবহারের তেল।
কেউ চায় জ্বালানী তেল।।
কেউ চায় মালিশের তেল।
এককথায়, ব্যক্তিগত,পারিবারিক,সামাজিক,রাজনৈতিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে তেলই সফলতা অর্জন ও মনোরঞ্জনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হয়তো ঐ একই কারনে তেলের মূল্যের এই উর্ধগতি।