প্রায় ৭৩ বছরের পুরনো দল আওয়ামীলীগ মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে যুগে যুগে এদলের নেতা কর্মীরা নির্যাতীত,নিগৃহীত হয়েছে। আর সেই কারণে এদেশের মানুষ এই দলটিকে হৃদয় উজাড় করে দিয়েছে।এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। টানা তিন মেয়াদে এই দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এতবড় সৌভাগ্য বা অর্জন অন্য কোন রাজনৈতিক দল কল্পনাও করতে পার না। আমার এই বলাটা অগ্রিম হলেও একটি সত্য নির্দ্বিধায় উল্লেখ করা যায় যে, সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে।
আর এজন্য এই দলটির নেতা কর্মীদেরকে সংযমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।কেননা জনগন এই দলটিকে অনেক দায়িত্বশীল বলেই মনে করে।এই দলের নেতা কর্মীদের অনেক সংযত ওমানবিক বলেই মূল্যায়ন করে।
সর্বোপুরী বি,এন,পি,জাতীয় পার্টি,ওস্বাধীনতা বিরোধী চক্র বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সাথে কারণে অকারণে যেরূপ অসংলগ্ন,অসংযত,অশালীন,অমানবিক ওবর্বর আচরণ করেছে তার সৃষ্ট ক্ষত জনগনের হৃদয় থেকে এখনও মুচে যায়নি।পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা জনগনের সাথে এমনি প্রদর।শন করেনি বলে জনগন আজতক এইদলটাকেই তাদের আস্হা, বিশ্বাস,ভরসার একমাত্র নির্ভরযোগ্য স্হান বলে মনে করে।
কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নেতা কর্মীর কথা বার্তা, আচার আচরণ কর্মকান্ড অনাকাঙ্খিত অহমিকায় ভরপুর।কোন কোন নেতার উদত্য উন্মাদনা, যদ্ধংদেহী মনোভাব,শারিরিক অঙ্গভঙ্গী দেখলে যে কারো মনে ভয়ের উদ্রেক ঘটায়।তাদের হাবে ভাবে তারা বুঝাতে চায় এদেশে ইতিপূর্বে বা তাদের আগে, কোন আওয়ামীলীগ নেতা কর্মী ছিল না।অনাগত ভবিষ্যতেও তাদের মতো এতো দামী নেতা আর আসবে না।আমৃত্যু তারাই নেতা থাকবে।আজন্ম আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় থাকবে।এহেন অবাস্তব,অবান্তর চিন্তার লক্ষ্ন ফুটে উঠে কোন কোন নেতার আচরণে।
দীর্ঘদিন দলটি ক্ষমতায় থাকার কারনে ইতিমধ্যে দলের মধ্যে অনেক রথি মহারথীর আবির্ভাব ঘটেছে। যাদের কথা বার্তা আচার আচরণে জনগন বিস্ময় বোধ করে।এদের কেউ কেউ এলাকায় স্বঘোষিত সম্রাটের মতো নিজকল উপস্হাপন করে।গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধাতে চায়।শান্ত পরিবেশটাকে অশান্ত করতে চায়।উন্নয়নে চিড় ধরাতে চায়।অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়।ক্ষেত্র বিশেষে দলীয় শৃংখলা,রিতিনীতি, সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখায়।জনগণের সেবকের শপথ পড়ে এরা মুনিবের মতো দৃষ্টতা দেখায়।এরা বুঝাতে চায় তারাই দলের কর্ণধার।
মূলত এরাই দলের ভিতরে থেকে জনগনের সাথে দলের সূক্ষ বন্ধনের সুতাটাকে ইঁদুরের ধারালো দন্ত আর বাদুরের সূচালো নখরের আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত ও ছিন্ন বিছিন্ন করে দিচ্ছে।আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের সুদীর্ঘ লালিত আবেগ ভালবাসাটাকে এরা এদের প্রত্যাহিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
অথচ এই দলটির, এই দেশটির মহান স্হপতি জনগণকে হৃদয় দিয়েই ভালবাসতেন।এই দলেরই বর্তমান নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগনের কল্যানে নিজের সবকিছুই উৎসর্গ করে চলেছেন।অথচ সেই দলেরই কিছু কিছু ছোটখাট,আধি,পাতি,সিকি,আধলী নেতারা কারণে অকারনে জনগনকে চোখ রাঙ্গায়।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কিংবা শেখ হাসিনার ত্যাগ কোন কিছুই এদের কাছে মুখ্য নয়।এরা চায় শুধুই ক্ষমতার স্বাদ।
২০০১ থেকে২০০৬ সাল পর্যন্ত বি,এন,পির ছোট বড় সকল পর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগ কর্মীদের যেভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে কথা বলতো এখনকার কিছু কিছু আওয়ামী লীগ নেতাও ঠিক একই ভাষায় কথা বলে।
বিগত প্রায় চৌদ্দ বছরে এদের অনেকেই হৃষ্ট পুষ্ট হয়েছে।গাড়ী বাড়ী করেছে।বিত্ত,বৈভব ও টাকার পাহাড় গড়েছে।অথচ খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এরা আওয়ামী লীগের অতীত জানে না।ত্যাগের ইতিহাস জানেনা। এরাই আবার নিজেদেরকে জনগনের প্রভু মনে করে।কেউ কেউ আবার নিজেকে প্রথম শ্রেণীর নাগরিক মনে করে।মূলতঃ এরাই দলের অর্জন,আদর্শ বিনষ্টকারী।
হঠাৎ গজিয়েউঠা এসব নব্য আওয়ামী লীগারেরা জানে না যে,আমাদের দেশটা জোয়ার ভাটার দেশ।এদেশের নদ নদীর মতোই ক্ষনে ক্ষনে বদলায় এদেশের মানুষের মন।নিমিষের জলে ভরে যায় জেগে থাকা ধূ ধূ বালুচর।আবার নিমিষেই বদলে যায় ভৌগলিক দৃশ্যপট।ষড়ঋতুর এই দেশে কখন যে মানুষ আবেগে কান্না করে, আবার কখন যে রুদ্ররোষে আগ্নেয়গিরির মতো ফু্ঁসে উঠে কেউ জানে না সুতরাং এদেশের মানুষের আবেগ অনুভূতি ইচ্ছা আকাংঙ্খার কথিত অকথিত ভাষা বুঝে চলার বিকল্প নাই।
মনে রাখাবাঞ্চনীয়,জননেত্রী শেখ হাসিনা আজো এদেশের মানুষের আস্হা,বিশ্বাস,ভরসার মূর্ত প্রতীক।তাকে বাদ দিলে বাকী সব যে পাবলিক এই সত্যটুকু মাথায় রাখতে হবে।মানুষ তাকে বিশ্বাস করে। ভালবাসে।সুতরাং যাকে মানুষ এতটুকু ভরসা করে, বিশ্বাস করে , জনগণের সেই ভালবাসায় গড়া ভান্ডারে হস্তক্ষেপ কারীরা কোনভাবেই যে দলের শুবাকাঙ্খী নয় তা বুঝে নিতে মনে হয় উদহারনের প্রয়োজন নেই।
একটি কথা না বললে নয় যে, যারা ক্ষমতায় গিয়ে ভবিষ্যতের কথা ভাবে নি,তারাই বার বার জনগন কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।তাই সুসময়ে দলের নেতা কর্মীদের শান্ত থাকতে হয়।ক্ষমতায় থাকা দলীয় নেতা কর্মীদের সংযত হতে হয়।মানুষকে শ্রদ্ধা ভালবাসায় আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়।কাউকে ছোট করে দেখার মধ্যে কৃতিত্ব নেই।
ইতিহাসের পাতায় পাতায় আমরা দেখতে পাই, যারা ক্ষমতায় গিয়ে উদ্ধত আচরন করেছে, মানুষকে অমর্যাদা কিংবা অবজ্ঞা করেছে, প্রকারান্তরে তারা এর কঠিন পরিণতি ভোগ করে করেছে।
অথচ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হল, ইতিহাসথেকে কেউ আমরা এই শিক্ষাটা গ্রহন করতে চাই না।
ধন্যবাদ
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
পাঠকপ্রিয় খবর সমুহঃ