মোঃ মোজাম্মেল হক, এডি:ডিআইজি, অধিনায়ক র্যাব-৪ঃ
চাটমোহরের আকাশে একটি দেদীপ্যমান ধ্রুব তারা সাবেক প্রাদেশীক পরিষদ সদস্য মরহুম অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সমাজীর যোগ্য উত্তরসুরী, সুসন্তান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ চাটমোহর মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আমাদের প্রাণের মানুষ হাসনায়েন মোমিন শিল্পী সমাজী ভাইয়ের আজ দশম মৃত্যু বার্ষিকী। চাটমোহরে তাঁর মত ভিন্ন চেতানার গণমুখী মানুষের সত্যই আজ বড় অভাব।
তখন আমি সদ্য জয়পুরহাট থেকে বদলী হয়ে বগুড়ায় নবাগত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেছি। ৬ মে বিকেলে শিল্পী ভাই ফোন করে জানালেন খুব শিঘ্রই তিনি সন্জু ভাই, নজরুল ভাই জিন্নাহ এবং সামাদ ভাই বগুড়ায় বেড়াতে আসবেন। আমি সানন্দে আমন্ত্রণ জানালাম।অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম। কারন তিনি কলেজ থেকে পিকনিকে রাজশাহী সুগারক্যান, রাজশাহী মহানগর পার্ক কিংবা দিনাজপুর স্বপ্নপুরী যেখানেই পিকনিকে গিয়েছেন অবধারিত ভাবে শিল্পী ভাইয়ের আমন্ত্রন শত ব্যস্ততা ফেলে কি এক দূনির্বার আকর্ষনে সপরিবারে সেখানে গিয়ে হাজির হয়েছি।
৭ মে খুব সকালে বন্ধু জিন্নাহর ফোনে ঘুম ভাঙলো। খুব অস্থির চিত্তে কান্নাজড়িক কন্ঠে বন্ধু জিন্নাহ জানালো শিল্পী ভাইয়ের হার্ট এটাক হয়েছে। শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। এম্বুলেন্সে করে পাবনা হাসপাতাল অবশেষে ঢাকা। সড়ক পথে ঢাকায় হাসপাতালের পৌঁছুতে বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যা। হাসপাতালে ৪ Heart এ টি block ধরা পরলো। অপারেশন থিয়েটারে শিল্পী ভাই মারা গেলেন। প্রতি মূহুর্তে জিন্নাহর কাছ থেকে Update নেয়ার চেষ্টা করেছি। মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বুকের পাঁজর ভেঙে গেছে। স্বজন হারানোর ব্যাথায় ডুকরে কেঁদেছি। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্তেও গুরুতর অসুস্থ শিল্পী ভাইকে কেন এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা নেয়া হলোনা এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। তেমনিভাবে তাঁর হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান চাটমোহর মহিলা কলেজে শিল্পী সমাজীর নামে কোন ভবনের নামকরন কেন হয়নি তার উত্তর অন্যদের মত আমিও জানিনা। আজ থেকে ৮ বছর পূর্বে আমাদের সকলকে বড় একা করে শোকসাগরে ভাসিয়ে চির বিদায় নিয়েছো তুমি। তোমার স্মৃতি চির অম্লান। তোমার আদর্শ চির ভাস্কর।
হে আল্লাহ অসম্ভব হৃদয়বান, সত্য, ন্যায়নিষ্ট, সদালাপি, অতি সরল মানুষটিকে বেহেস্তবাসী করুন ।মহান শ্রষ্ঠার অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবীতে কিছু মানুষের স্মৃতি থাকে চির অম্লান। নীল আকাশ, সবুজ ঘাস, পাখির আনন্দময় বিচরণ, ফুলের হাসি, নদীর মৃদুমন্দ কুল কুল রবে বয়ে যাওয়া, সমুদ্রের গর্জন, পাখির কুজন, চাঁদের আলোতে, কাক ডাকা ভোরে, অলস দুপুরে, গোধুলী লগ্নে, গভীর রজনীতে তোমাকে খুঁজে ফিরি নিরন্তর। তোমার নাম শিল্পি, আদর করে আত্মজাগন তোমায় ডাকতো শিলু বলে। সহজ সরল মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন নৈতিকতার বিষয়ে আপোষহীন আদর্শ, প্রতিভাবান এবং সদা হাস্যউজ্জ্বল শিক্ষক তুমি। কতদিন কতবার তোমার সঙ্গে আকর্ষনীয় বিমুর্ত মূহুর্তগুলো কেটেছে শিল্প, সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং মানুষের জীবনাচরণ নিয়ে অনর্গল কথা বলে। বন্ধু মহলে তুমি ছিলে শ্রেষ্ঠ শ্রোতা। তুমি ছিলে চাটমোহর মহিলা কলেজের অত্যন্ত দক্ষ এবং সৃজনশীল অধ্যক্ষ।তোমার আকর্ষনে ছুটে গিয়েছি নাটোর থেকে ঈশ্বরদী, জয়পুরহাট থেকে দিনাজপুর, ঢাকা এবং রাজশাহী থেকে চাটমহরে, তোমার সাজানো বাগানে অনুষ্ঠিত প্রতিটি উৎসবে। তোমার অকালে চলে যাওয়া অভিমানী ভালবাসার মানুষ চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার মত কষ্টদায়ক । শ্রষ্ঠার নিকট প্রাথনা তোমার বর্তমান সময়গুলো কাটে যেন শ্রষ্ঠার সান্নিদ্ধে এবং তার শ্রেষ্টতম সুন্দর ব্যবস্থাপনায় মেহমানরূপে। তুমি বিহনে জিরো পয়েন্ট, থানা মোড়, তোমার রেখে যাওয়া প্রিয় প্রতিষ্ঠান মহিলা কলেজ, জিন্নার দোকান সর্বত্র অসীম শূন্যতা, চিরচেনা চাটমোহর অচেনা মনে হয়। তোমার বিরহে রোদেরা হাসেনা, পাখিরা গান গায় না, প্রকৃতির অনিন্দ সুন্দর বৃক্ষগুলোর পাতা দুঃখে শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে বেদনায় নীল হয়ে, রাতের জোনাকির আলো নিভে যায়, ঝিঝি পোকা কেঁদে ফেরে, শিশুরা হাসতে ভুলে যায়।প্রতিটি ধুলোকণা, সবুজ ঘাষ, নীল আকাশ, রাতের তারা, সকল আত্মীয় পরিজন, শুভাকাঙ্খি বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মজা তুমি বিহনে বিরহী। আমাদের পৃথিবী যেন জলশুন্য, জনমানবহীন ধুধু বালুচর ১০ বৎসর পূর্বে তুমি চলে গেছো আমাদের ছেড়ে দূর অচিন দেশে। আমারা তোমার আত্মজা তোমাকে স্মরণ করি প্রতিটা মূহুর্তে। বেহেস্তের স্বচ্ছ সরোবর পাশে, আংগুর,আপেল, আখরোট বাগানে, শ্রষ্ঠার চির প্রশান্তি সান্নিধ্যে থেকো অনাদি অনন্তকাল।