আলমগীর আলম- ন্যাচারোপ্যাথি, আকুপ্রেসার বিশেষজ্ঞঃ একসময় ঘরে ঘরে তামার পাত্র, গ্লাস ব্যবহার হতো, পানি তামার গ্লাসে পান করা হতো। সেই মানুষ হয়তো বিজ্ঞান টা জানতো না কিন্তু দৈনিন্দন জীবনে তামার পাত্রে পানি পান করা হতো।
আধুনিক গবেষণায় বলা হচ্ছে তামার পাত্রে রাখা পানি অনেক গুণের, বিশেষ করে এটা চার্জ ওয়াটারে রূপান্তর হয় যা কিনা শরীরে জন্য অনেক প্রয়োজনীয় মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করে।
প্রাচীন রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে, ভারতীয় আয়ুর্বেদে পর্যন্ত তামার উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন রোমান গ্রন্থগুলিতে, পেটের জীবাণু মেরে ফেলার জন্য তামা-ভিত্তিক ওষুধের কথা বলা আছে। আয়ুর্বেদ মতে, তামার পাত্রে পানি পান করলে পেট ডিটক্সিফাই এবং পরিষ্কার হয়।
তামায় এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বর্তমান, যা পেরিস্টালসিসকে উদ্দীপিত করে, পেটের আস্তরণের প্রদাহকে কমায় এবং হজম ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়া, তামা পেটের আলসার, বদহজম এবং পাকস্থলীর সংক্রমণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চমৎকার প্রতিকার।
তামা হার্টের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, রক্তনালীগুলিকে প্রসারিত করতে এবং প্লাক পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, তামার ঘাটতির ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলি কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। যার ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে।
তামাতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য থাকে। তামা দ্রুত ক্ষত নিরাময়ের পাশাপাশি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতেও সহায়তা করে। এছাড়া, আর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের স্বস্তি প্রদান করে। তামা হাড় মজবুত করতেও সহায়তা করে।
তামা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে আয়রন শোষণ করতেও সহায়তা করে, এর অভাব হলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। তাছাড়া, মানবদেহে তামার ঘাটতির ফলে বিরল হেমাটোলজিকাল ডিসঅর্ডার হতে পারে, যার ফলে শ্বেত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতানুসারে, তামা কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা হ্রাস করতে অত্যন্ত সহায়ক। শৈশব থেকেই যদি শরীরে কপারের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে তা হাইপোটেনশন বিকাশের দিকে পরিচালিত করে, তবে প্রাপ্তবয়স্করা যদি তামার ঘাটতিতে ভোগেন, তাহলে তাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হতে পারে। তামার ট্রেস পরিমাণ আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এবার প্লাস্টিকের পাত্রের পানি রাখা বন্ধ করে তামার পাত্রে পানি রেখে তা পান করার অভ্যাস করতে পারি। শুধু এই টুকু পরিবর্তন করে যদি শরীর ভাল রাখা যায় তাহলে মন্দ কি!