শেখ নুরুল আবছার নিসু,ব্যূরো প্রধান,চট্রগ্রাম।
স্বাধীনতার পূর্বে এবং স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে রাজনীতির চেহারাটা ঠিক এমনটা ছিল না। সেনানিবাস থেকে বের হয়ে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন থেকে বলেছিলেন তিনি রাজনীতিকে কঠিন করে দিবেন, ঠিক তার পর থেকেই রাজনীতি কঠিন হওয়ার পরিবর্তে কলুষিত হওয়া শুরু করে। নতুন দল গঠনের তাগিদে সেই সময়ের বিএনপিতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সুবিধাবাদী দলকে নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কোনদিন রাজনীতি করেনি এমন কিছু নতুন মুখেরও আবির্ভাব ঘটেছিল তখন রাজনীতিতে। স্বাধীনতাবিরোধী দলটি তখন তরতর করে তার রাজনীতিতে আশ্রয় নিয়েছিল, কেন না তখন এই ধরনের দেশবিরোধীরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে বেকায়দা অবস্থায় ছিল। জগাখিচুড়ি একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে জেনারেল জিয়া তার খেয়াল-খুশিমতো যখন যাকে পছন্দ তাকেই যে কোন ক্ষমতায় বসিয়ে দিতেন এবং যে কারও কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে নিতেন। ফলে অঘোষিতভাবে রাজার রাজত্বে বসবাস করত সেই সময়ের রাজনীতি। রাজনীতিতে লোভ বা দুর্বৃত্তায়ন যা কিছু ঘটেছে, মূলত সেই সময় থেকেই তার হাতে খড়ি। তারপর পাল্লা দিয়ে রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে অদক্ষতা, অসততা, পেশীশক্তি আর দস্যুতা। ত্যাগে-মহিমায় বলীয়ান ছিল যে সকল রাজনীতিবিদ, এক সময় কালের আঘাতে তারা ঝরে পড়তে থাকে একের পর এক। শূন্য স্থান পূরণ হয়ে যায় অতিলোভী, অদক্ষ, অসৎ ,দুর্নীতিবাজ আর দুর্বৃত্তদের দ্বারা। সমাজের দস্যু, ডাকাত আর দুর্বৃত্ত বলে পরিচিত মুখগুলো ধীরে-ধীরে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় এসে রাজনৈতিক পরিচয়ে আরও ব্যাপক হয়ে উঠে।
এমন ক্রান্তিকালে রাজনীতিকে আবার তার পূর্বস্থানে ফিরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না এমন লোক সমাজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। শুদ্ধ রাজনীতি ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে। ঠিক এমনই সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে একটি আশাব্যঞ্জক নিশানা পাওয়া যায়। নষ্ট রাজনীতিকে শুদ্ধ স্থানে পৌঁছে নেয়ার কাজটি আওয়ামী লীগের মত ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই আশা করা যায়। বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছ থেকে জাতি এটুকু আশা করতেই পারে। ২০০৮ সালে সরকার প্রতিষ্ঠালগ্নে শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন, তাদের বেশ ক’জন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই সীমাহীন সম্পদ আয়ের খবরা-খবর প্রকাশ হয়। নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী স্বেচ্ছায় প্রদত্ত সম্পদের বর্ণনায় দেখা যায় ব্যাপক আয় এবং সম্পদ বৃদ্ধির আভাস। রাজনীতি এবং রাষ্ট্রক্ষমতা অর্থ উপার্জনের বড় মাধ্যম হিসাবে এইসব মন্ত্রীদের জীবন প্রণালীতে ফুটে ওঠে। তবে এবারের মন্ত্রিসভায় দলীয় সভানেত্রীর জবাব পেয়ে যায় জাতি। যে সব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আয় এবং সম্পদের বিবরণ মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়, তাদের একজনকেও নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত না করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ত্যাগী, দক্ষ এবং সৎ রাজনীতিবিদদের পুরস্কৃত করেন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে। অদক্ষ, অসৎ আর দুর্বৃত্ত রাজনীতি হোঁচট খায় এবার। স্পষ্টতই বুঝা যায়, শেখ হাসিনা তার দল এবং মন্ত্রিসভায় প্রশ্নবিদ্ধ রাজনীতিবিদদের স্থান দিতে চাননি। আওয়ামী লীগের এমন একটা কাজ করা উচিত ছিল অনেক আগেই। তবে দেরিতে হলেও এমন একটি মহৎ উদ্যোগের জন্য শেখ হাসিনা অভিনন্দন পেতে পারেন। তার এই উদাহরণ রাজনীতির মাঠে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পজিটিভ ফলাফল আনতে পারে। যে সব ভাল মানুষ এতদিন রাজনীতি নামের অবৈধ অর্থ উপার্জনের মেশিনের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে বরং রাজনীতির বাইরে থাকার সিদ্ধান্ত নিতেন, তারা আজ আবার নতুন করে রাজনীতি নিয়ে ভাবতে পারেন।
রাজনীতিতে মেধা, দক্ষতা, আর সততার সংযোগ না হলে একটি দেশের উন্নয়ন গতিধারা এগিয়ে নেয়া যায় না। বাংলাদেশ সামাজিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে আজ এমন এক স্থানে পৌঁছে গিয়েছে যে, শুধু রাজনীতিটি যদি সঠিক রাস্তায় হাঁটতে পারে তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন গতি রোধ করার আর কোন উপায় থাকবে না। বাংলাদেশের কৃষিখাত, পোশাক শিল্প খাত এবং প্রবাসী আয় খাত বিশ্ব বাজারে বিশেষ একটি জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে এবং বাংলাদেশকেও সমৃদ্ধির একটি স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। এই উন্নয়নকে ধরে রাখার জন্য শুধু আমাদের প্রয়োজন দক্ষ ও সৎ জনপ্রতিনিধি, শুদ্ধ রাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং সুশাসন। আর এসবই দিতে পারে দক্ষ, মেধাসম্পন্ন এবং সৎ এবং সত্যের রাজনীতি। রাজনীতি শুদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে শেখ হাসিনার কঠিন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে চাই। দুর্নীতি নিমজ্জিত রাজনীতিকে শুদ্ধ পথে নিয়ে আসার কাজটি সহজ নয়। তবে এই কঠিন কাজটি বাংলাদেশে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছ থেকেই আমরা আশা করতে পারি। ঘণ্টাটা তিনি একবার বেঁধে দিলেই হবে। পরের কাজটি করবে আগত পদ্ধতি। অদক্ষ, অসৎ দুর্নীতিবাজ লোকজন নিয়ে একদিন যে রাজনৈতিক পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল, ধীরে ধীরে যে পদ্ধতি গ্রাস করেছিল আমাদের সুস্থ রাজনৈতিক জীবনধারা- শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ হাতে দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বের প্রতি ‘না’ আচরণ দিয়ে শুরু হওয়া রাজনীতির সৎ নেতৃত্ব তেমনিভাবে ধীরে ধীরে শুদ্ধ রাজনীতি ফিরিয়ে দেয়ার পদ্ধতির জন্ম দিক এই আশায় রইলাম।
পাঠকপ্রিয় খবর সমুহঃ